যেখানে একজন অর্থশাস্ত্র বিশেষজ্ঞ বলছেন যে করমাফি ব্যাঙ্ক ব্যবস্থার সচলতার জন্য মোটেও সুখদায়ক নয়, কারণ নতুনভাবে লোন বা ঋণ নেওয়ার সময় কৃষকদের অসুবিধা অনেক বেড়ে যাবে এবং ঋণ মাফ এর সাহায্যে বহু কৃষক তাঁদের গৃহীত ঋণ পরিশোধ করা বন্ধ করে দেবে, ফলে ব্যাঙ্কে অর্থের ঘাটা পড়ে, যেই কারণে সরকারি তরফ থেকে এই পরিমাণ টাকা যতদিন না ফেরত আসে ততদিন পর্যন্ত ব্যাঙ্ক নতুন করে কৃষিঋণ প্রদান বন্ধ করে দেয়, সেখানে উত্তরপ্রদেশের একজন কৃষক তাঁর কাজের মাধ্যমে এক বৃহৎ ইতিহাস রচনা করতে চলেছেন। তিনি অর্থ বিশেষজ্ঞদের সমস্ত ধারণাকে ভুল প্রমাণ করেছেন।
আসলে উত্তরপ্রদেশের কুশীনগর জেলার পৃথ্বীরাজ নামক গ্রামের নাগা কুশবাহা নামক এক সৎ চাষির ঋণ মাফির কোনো সরকারী সাহায্যের প্রয়োজন নেই। এর জন্য তিনি ব্যাঙ্ককে লিখিত পত্র মারফৎ জানিয়েছেন এবং সম্পূর্ণ সততার সাথে নিজের সমস্ত ঋণ চুকিয়েছেন, এবং তারপর তিনি আবার নতুন করে কৃষিঋণ নিয়েছেন। যেখানে উত্তর ও মধ্য ভারতের সমস্ত কৃষক ঋণ মুক্তির জন্য আন্দোলন করছে, রাস্তায় মিছিলে নামছে যা বিপক্ষ রাজনৈতিক দলের হাতিয়ার হয়ে উঠছে দিনকেদিন, সেখানে নাগা কুশবাহা ব্যাঙ্কের ঋণ অত্যন্ত সততার সাথে পরিশোধ করার সাহস দেখিয়েছেন এবং সত্যই তিনি সত্যিকারের সৎ মানসিকতার পরিচয় দিয়েছেন।
কৃষক নাগা কুশবাহার মতে সমস্ত কৃষকদের ঋণ মুক্তির পর সরকার কোনো না কোনো ভাবে আমাদের কাছ থেকে টাকা তুলেই নেবে, এই অবস্থায় ব্যাঙ্ককে ক্ষেপিয়ে কি লাভ, তার বদলে যদি আমি খুব তাড়াতাড়ি ব্যাঙ্কের দেনা পরিশোধ করে দিই তাহলে ভবিষ্যতে খুব দরকারি সময়ে আমি ব্যাঙ্কের সাহায্য পেতে পারি। এই বিষয়ে বলে রাখি নাগা কুশবাহা তমকুহিরাজ তহশীলের দুদহী ব্লকের পৃথ্বীপুর গ্রামের একজন খুব গরীব কৃষক। তাঁর পৃথ্বীপুর, বিষ্ণুপুর, মথিয়া ভোক্রিয়া এই তিনটি গ্রামে কিছু জমি আছে। উনি সেই সব জমিতে চাষের জন্য পূর্বাচল গ্রামীণ ব্যাঙ্কের দুদহী শাখার থেকে কৃষাণ ক্রেডিটকার্ডের সহায়তায় কৃষিঋণ নিয়েছিলেন। এই ঋণ পরিশোধ কালে টাকার রাশি ছিলো ১ লক্ষ ৬ হাজার, এই পরিমাণ টাকা উত্তরপ্রদেশের যোগী সরকারের ঋণ মাফের মাপকাঠির মধ্যেই পড়ে, কিন্তু তিনি সেই সুবিধা গ্রহণ তো করেনই নি, বরং ব্যাঙ্কে গিয়ে ঋণ পরিশোধের জন্য লিখিত পত্র প্রদান করে আসেন।
আরও পড়ুন চিনে চাষ হচ্ছে ‘ডায়মন্ড ব্ল্যাক’ নামের কালো আপেলের
বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের দ্বারা প্রাপ্ত খবর মোতাবেক পূর্বাঞ্চল গ্রামীণ ব্যাঙ্কের দুদহী ব্রাঞ্চের ম্যানেজার নাগা কুশবাহার এই কাজের তারিফ করেছেন। তিনি বলেছেন এই সিদ্ধান্ত একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করলো। নাগা কুশবাহার কাছে মোট তিন বিঘা জমি আছে, যেখানে তিনি আখ উৎপাদন করেন। তিনি গর্বের সাথে বলেছেন যে এখোনো কাওর একটি পয়সাও তিনি হজম করেন নি, তো সরকারি পয়সা বাকি রাখবো কেন? তিনি আরও বলেছেন ঋণ পরিশোধ না করলেও একসময় না একসময় আমাদের ঘাড়েই তো চাপ এসে পড়বে, এরজন্য তিনি ঋণ পরিশোধ করে অল্প খেয়েও সতভাবে জীবনযাপন করতে চান যাতে ভবিষ্যতে কেউ তাঁর প্রতি আঙ্গুল তুলতে না পারেন।
নাগা কুশবাহার মতো কৃষকরা সরকারের কাছে একটি দৃষ্টান্ত স্বরূপ হতে পারেন, যাকে পাথেও করে সরকার অন্য কৃষকদের যেন বলতে পারে যে ঋণ মাফের মতো বিষয়ে ভরসা না রেখে নিজের রোজগার বাড়াও এবং সময় মতো ব্যাঙ্কের ঋণ সুদ সমেত ফেরত দাও।
- প্রদীপ পাল (pradip@krishijagran.com)
Share your comments