বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়িতে হ্ল্যাশিংমং চৌধুরী চাষ করছেন বিশ্বের এই সবচেয়ে দামি আম (World’s most expensive mango) | এর বাজার মূল্য হলো প্রতি কেজি ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই আম ৫০০০-৬০০০ টাকায় বিক্রি হয়ে থাকে।
বাংলাদেশের বাজারে প্রচলিত আমের দাম প্রতি কেজি জাতভেদে সাধারণত ৪০ থেকে ১০০ টাকাতেই পাওয়া যায়। দামি এই আমটি বাংলাদেশের কোন জাত নয়। কৃষি কর্মকর্তারা জানান, আমটি জাপানি প্রজাতির বলে জানিয়েছেন। তবে এটি বিভিন্ন দেশে চাষ হচ্ছে।
সূর্যডিম আমের বৈশিষ্ট্য (Characteristics of Suryadim Mango) :
মূলত, জাপানি ভাষায় আমটিকে বলা হয় 'মিয়াজাকি' (Miyazaki)। বিশ্ববাজারে এটি 'রেড ম্যাঙ্গো' বা 'এগ অব দ্য সান' নামেও পরিচিত। তবে বাংলায় এই আমটি পরিচিতি পেয়েছে "সূর্যডিম" নামে। এই আমের গড়ন সাধারণ আমের থেকে অনেক বড় ও লম্বা হয়ে থাকে | এর স্বাদ খুবই মিষ্টি এবং আমের বাইরের আবরণ দেখতে গাঢ় লাল অথবা লাল-বেগুনির মিশ্রণের একটি রঙের। এক একটি আমের ওজন ৩৫০ থেকে ৪৫০ গ্রামের মতো বলে জানিয়েছেন কৃষি কর্মকর্তারা। সে হিসেবে বাংলাদেশের বাজারে এক একটি আমের দামই পড়ে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা।
কিভাবে চাষ করলেন এই কৃষক?
খাগড়াছড়ির কৃষক হ্ল্যাশিংমং চৌধুরী ইতিমধ্যেই দামি এই আমটি চাষ করে সাড়া ফেলে দিয়েছেন | খাগড়াছড়ি জেলা সদর থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে মহলছড়ি উপজেলা। ওই উপজেলার ধুমনিঘাট এলাকায় ১২ ফুট উঁচুতে ৩৫ একর জায়গাজুড়ে তিনি গড়ে তুলেছেন হরেক রকম ফলের বাগান। তার এই বাগানের নাম 'ক্রা এএ এগ্রো ফার্ম'। সেই বাগানের একটি অংশেই তিনি চাষ করেন 'সূর্যডিম' আম। তবে, বিরূপ আবহাওয়া ও জলের সমস্যা থাকার দরুন তাকে এই আম চাষে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় |
২০১৭ সালে তিনি প্রথম ভারত থেকে এই আমের ১০-১৫টি চারা কিনে নিজের বাগানে রোপণ করেন। ২ বছরে গাছ বড় হয়ে ওঠে এবং ২০১৯ সাল থেকে তিনি আম তোলা শুরু করেছেন। তিনি জানান, সাধারণত মা গাছ থেকেই চারা রোপণ করে তার বাগানের পরিধি বাড়িয়েছেন। এখন তার বাগানে সূর্যডিমের ১২০টির মতো গাছ রয়েছে। যেগুলোর উচ্চতা ৬/৭ ফুটের মতো। চারাগুলো যত্ন করে পালন করায় এর মধ্যে প্রায় ৫০টি গাছে ৩-৪ বছর ধরে ফলন হচ্ছে, যা থেকে প্রতি বছর ৩০০ থেকে ৪০০ কেজি আম হয় বলে জানিয়েছেন তিনি |
চাষের সময় (Planting time):
সূর্যডিম আম সাধারণত মে মাসের ২০ থেকে ২৫ তারিখে পাকা শুরু হয় এবং জুনের ১৫ থেকে ২০ তারিখ পর্যন্ত পাওয়া যায়। চলতি বছর একটি লম্বা সময় খরা মৌসুম থাকায় এবার আম চলে এসেছে সময়ের আগেই।
পরিচর্যা:
কৃষকের মতে, এই জাতের আম চাষে বিশেষ পরিচর্যা নিতে হয় | পর্যাপ্ত আলো, জল, ছায়া সরবরাহের উপযোগী থাকতে হয়| এছাড়াও, গুরুত্বপূর্ণ হলো আম একটু বাড়ার সাথে সাথে প্যাকেট দিয়ে ঢেকে রাখতে হয় | গাছ থেকে আম তোলার পর বেশিদিন নিজের কাছে রাখা যায়না | গরমের জন্য দ্রুত তা বিক্রি করে দিতে হয় | তিনি এই আম অনলাইনে বিক্রি করেন এবং অনেককে উপহার দেন| প্রতি কেজি আম ৩০০ থেকে ৫০০টাকায় বিক্রি করলেও এই আম বাজারে গিয়ে দ্বিগুণ হয়ে যায়।
হ্ল্যাশিংমং-এর পরিকল্পনা অনুযায়ী, তিনি চান এই আমের ফলন দেশব্যাপী ছড়িয়ে দিয়ে একে একটি রপ্তানিযোগ্য পণ্যে পরিণত করা। তিনি বাংলাদেশে কৃষকদের বিনা পয়সায় চারা দিচ্ছেন | তিনি বলেন, প্রত্যেক কৃষক যদি এই আমের চাষ করেন তবে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা যাবে | এই আমের বাণিজ্যিক ফলন হলে কৃষকদের বিপুল লাভের সম্ভাবনা আছে | তাই তিনি, তার বাগানের আমের ম্যান নির্ধারণের জন্য বিশেষজ্ঞদের কাছে পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্য পাঠিয়েছেন।
নিবন্ধ: রায়না ঘোষ
আরও পড়ুন - LPG Cylinder - মাত্র ১৫ টাকায় এলপিজি গ্যাস সিলিন্ডার কিনুন, কীভাবে জানেন?
Share your comments