পশ্চিমবঙ্গের সরকারের কৃষি বিপণন বোর্ডের প্রচেষ্টায় কৃষকদের জন্য প্রায় প্রতিটি ব্লকস্তরে অন্ততঃ একটি করে "কৃষক বাজার" তৈরী করা হয়েছে। ২০১৪ সাল থেকে এখন অবধি ১৮৬ টি নিয়ন্ত্রিত বাজার তৈয়ারী করা হয়েছে পশ্চিমবঙ্গে। উত্তরবঙ্গেও এর ব্যতিক্রম হয়নি। উত্তরবঙ্গেও তৈরী হয়েছে এমন সব বাজার। কিছুটা ঝা চকচকে মডেল নিয়ে এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে অনেক ক্ষেত্রেই সেই জায়গায় ব্লক কৃষি আধিকারিকদের (এ ডি এ) অফিসগুলিরও স্থানান্তরন হয়েছে। সেগুলিকে ও অনেকটা নব কলেবরে সাজানো হয়েছে। আবার কিছু এমন "কৃষক বাজারও" আছে সেগুলি সত্যিকারের অর্থে এখনো শুরুই হয়নি। যাই হোক,মোদ্দা কথা এই বাজারগুলো যে উদ্দেশ্যে করা যে কৃষকেরা ন্যায্য দাম পাওয়ার বিষয়টি বা যাদের উদ্দেশ্যে করা হচ্ছে বা হয়েছে সেই চিরশোষিত "কৃষকগণ" এই বিগত বছরের এখন অবধি তারা কি পেয়েছেন সেটা একটু বিচার করা যেতে পারে কি!?আসুন কিছু নজর দেওয়া যাক -
উত্তরবঙ্গের একটি গুরুত্বপূর্ণ বাজার হল "ফালাকাটা বাজার" যেটি আলিপুরদুয়ার জেলায় বর্তমানে বিদ্যমান। এখানের ময়নাতলী গ্রাম পঞ্চায়েতের তালিকেরটারীরীর একজন চাষী শ্রী পঞ্চানন রায়, যিনি সারা বছর ধান করার পাশাপাশি বিভিন্ন টমেটো, লঙ্কা, ভেন্ডি এই সব চাষ করে থাকেন তিনি বলেন, এই নিয়ন্ত্রিত বাজারের একটা লাভ হয়েছে যে আমি একজন চাষী হিসেবে কাঁচামাল নিয়ে এখানে বসার জায়গা পাচ্ছি। যেটা পুরানো ফালাকাটা বাজারে পাই না। কারণ সেখানে অন্য দোকানদার দিয়ে ভর্তি। পণ্যের দামের ব্যাপারে বলা হলে তিনি বলেন, না তেমন কোনো ফারাক এখানে পাই না, যেদিন যেমন বাজার সেদিন তেমন। "ফোরেরদের হাত থেকে এখানেও রেহাই নেই"। কাঁচামাল যেদিন বেশি ওঠে সেদিন দাম পড়ে যায়। তিনি এটাও উল্লেখ করেন যে, একটা বড় অসুবিধার এখানে হয় সেটি হলো এখানে ঢোকার জায়গা আছে কিন্তু বের হবার কোন জায়গা বা গেট নেই। এছাড়া পাশের পাকা রাস্তাটা এতো ছোট যে মাল নিয়ে যাতায়াত করতে প্রচুর অসুবিধা হয় বিশেষ করে বাজারের সময়। তিনি আশা করেন যে, যদি সরকার বা কেউ যদি এই দামের ব্যাপারটা নিয়ন্ত্রণ করত বা বেশি মাল উঠলেও ন্যায্য মূল্য দিয়ে সরকার যদি কিনে নিত তবে খুব ভালো হত। অলিপুর জেলার আর একটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গা হল জয়গা সেখানে একটি নিয়ন্ত্রিত বাজার গড়ার প্রচেষ্টা চলছে। প্রথম থেকেই কিন্তু আজ অবধি তা সম্পূর্ণ করে উঠতে পারেনি দফতর। সেখানে একটি মাত্র ন্যায্য মূল্যের দোকান খুলেছে বাকি সব বন্ধ হয়ে পড়ে আছে। এই জেলার বাকি সব কটি "নিয়ন্ত্রিত বাজার" হয় বন্ধ, নয় আংশিক ভাবে খোলা।
এবার আসা যাক জলপাইগুড়ি জেলায়, এই জেলায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বাজারগুলির একটি হলো ধুপগুড়ির বাজার। এই ধুপগুড়ির নিয়ন্ত্রিত বাজার শুধুমাত্র এখন সরকারি ভাবে ধান বিক্রি করা হচ্ছে। অন্যান্য সবজি বা অন্য কিছু এখানে কোনো কিছুই বিক্রি করা হয় না।এর কারণ হিসেবে জানতে চাইলে ধুপগুড়ির একজন ফার্মারস প্রোডিউসার অর্গানাইজেশন এর সেক্রেটারি শ্রী ধ্রুব রায় বলেন যে, ধুপগুড়ির নিয়ন্ত্রিত বাজারটি বাস্তব সম্মত নয়, এটি মূল শহর থেকে অনেকটা দূরে, জায়গাটা এতটাই ছোট যে শুধুমাত্র একটা সবজিবেচা কেনার মতোও পর্যাপ্ত জায়গা সেখানে নেই। এছাড়া এই জেলার ময়নাগুড়ির নিয়ন্ত্রিত বাজারটি সবেমাত্র খুলেছে। সেখানে দু একটি দোকান-ঘর বসলেও সেভাবে চালু হয়নি। কোচবিহার জেলার সিতালকুচি ব্লকের "নিয়ন্ত্রিত বাজারটি"বেশ চালু হয়েছে তবে এই জেলার অন্যান্য ব্লকের বাজারগুলি হয় আংশিক পরিত্যাক্ত, নয় এখনো চালুই হয় নি।
আরও পড়ুন শিক্ষামূলক ভ্রমণ : জলপাইগুড়ি কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্র
কোচবিহার জেলার একজন পুরস্কার কৃতী চাষী শ্রী বিবেক মজুমদার বলেন যে, এখানে অবস্থিত কৃষি দফতরের অধিকারিকরা দিনরাত এখানে যাতায়াত করেন, এগুলি তারা দেখেন এইসব নিয়ে কাজ করেন কিন্তু কীভাবে এই সব সমস্যা থেকে বের হওয়া যায় বা যেতে পারে তা নিয়ে তাদের কাছে কোনো বাস্তবসম্মত পরিকল্পনা নেই অথবা আন্তরিক ভাবে তাঁরা সচেষ্ট নন"। এই নিয়ন্ত্রিত বাজারের কিছু বাজার রয়েছে যেগুলি ই-নাম(e-Nam) এর আওতায় সেগুলিও খুব একটা কার্যকরী এখনো হতে পারে নি। আমাদের দেশের বাস্তব সমস্যা এখানেই যে, খুব ভালো পরিকল্পনা হয়তো নেওয়া হয় কিন্তূ তার বাস্তবায়ন কিভাবে সম্ভব তার উপরে কাজটি অসমাপ্তই থেকে যায়। যাইহোক কৃষকেরা আশা করে থাকে। কথায় আছে,"আশায় মরে চাষা"! দেখা যাক সেই সুদিন আদৌ আসে কি না।
- অমরজ্যোতি রায় (amarjyoti@krishijagran.com)
Share your comments