খাদ্যশস্য চাষে ব্যবহার করা জমি থেকে সর্বাধিক মুনাফা পাওয়ার জন্য ত্রিপুরা বৃহস্পতিবার ঘোষণা করেছে যে তারা ভুট্টা, মাসকলাই বা মুগ ডাল চাষে ৫০,০০০ হেক্টর ধানের ক্ষেত ব্যবহার করবে।
ত্রিপুরার কৃষিমন্ত্রী প্রণজিৎ সিংহ রায় জানান, “সরকারে পালা বদল হয়েছে। কিন্তু তার জন্য খাদ্য-শস্য উৎপাদনে কোনও ঘাটতি হওয়ার কারণ নেই। আমাদের সরকার সেই বিষয়টি গুরুত্বের সাথে দেখছে।”
রাজ্য সচিবালয়ে এক সংবাদিক সম্মেলনে সাংবাদিকদের সাথে আলাপচারিতায় প্রণজিৎ সিংহ রায় বলেন, কৃষকরা যখন ধানের ফলন ফলিয়ে বছরে ২০,০০০ টাকা উপার্জন করেন, সেই একই পরিশ্রমে ভুট্টার ফসল থেকে ৫৪,০০০ এবং মাসকলাই থেকে ৩৪,০০০ টাকা উপার্জন করতে পারবেন। তবে, নতুন এই প্রকল্পটিকে ‘উপার্জন বিপ্লব’ আখ্যা দিয়ে মন্ত্রী দাবি করেছেন, যে এটি সবুজ বিপ্লব এবং অতীতের শ্বেত বিপ্লবের মতোই মূলত উপকারী বলে প্রমাণিত হবে। কৃষিমন্ত্রী আরও জানান, “আমরা আগামী তিন বছরে ধান চাষের সাথে জড়িত ৫০,০০০ হেক্টরকে ভুট্টা ও মাসকলাই ফসলে রূপান্তর করার পরিকল্পনা করছি। এটি কৃষকদের উচ্চ মুনাফা এবং আরও ভাল আয় দেবে।”
২০১৩ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে বিজেপি-আদিবাসী পিপলস ফ্রন্ট অফ ত্রিপুরার (আইপিএফটি) সম্মেলনের অন্যতম প্রধান প্রতিশ্রুতি ছিল কৃষকদের আয় দ্বিগুণ করা। মন্ত্রী বলেন, “সরকার মনে করছে ভুট্টা ও মাসকলাই ধানের চেয়েও বেশি লাভবান। কারণ তাতে কম জল লাগে এবং সারা বছর ধরে চাষ করা যায়।”
কৃষকদের অধিক লাভ (Double farmers income)-
রাজ্য কৃষি বিভাগের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ত্রিপুরার ৯৫ শতাংশ কৃষক প্রান্তিক শ্রেণির এবং গড়ে ১.১৯ একর কম জমির মালিক। এর মধ্যে ৯৫ শতাংশ জমিতে প্রাথমিকভাবে ধান চাষ হয়। কৃষিমন্ত্রী বলেছেন যে, তাদের জরিপ রিপোর্টে দেখা গেছে, ধান চাষ করলে প্রতি কেজিতে ১ টাকা বিনিয়োগে ১.৪৯ টাকা উপার্জন হয়। অর্থাৎ, রিটার্ন ৪৯ পয়সা। সেখানে, ভুট্টা চাষে ২.৯৯ টাকার রিটার্ন দেয়।
সরকারের নতুন পরিকল্পনা অনুসারে, ৫০,০০০ হেক্টর জমির ধানের মধ্যে ২৮,০০০ ভুট্টা চাষের জন্য ব্যবহৃত হবে এবং ২,০০০ মাসকলাই চাষ করা হবে। তাছাড়া, এই নতুন ফসল বর্তমান আগের চাষের তুলনায় তিনগুণ বেশি লাভজনক। পশুদের খাদ্য হিসেবে পুরো উদ্ভিদ ব্যবহার করা যায়। ”
অন্যদিকে, প্রতি হেক্টর জমির জন্য ৬,০০০ টাকার আর্থিক সহায়তা দেওয়ার পরিকল্পনা করছে সরকার। প্রকল্পটি বাস্তাবায়িত হলে প্রায় ৬০,০০০ কৃষক উপকৃত করবে বলে আশা করা হচ্ছে। পাশাপাশি, কৃষকদের দেশ ও বিদেশে বিপণন সহায়তাও সরবরাহ করা হবে।
বেবি কর্নের চাহিদা -
“বেবি কর্নের বা ছোট মাপের ভুট্টার সর্বত্র বিশাল চাহিদা রয়েছে। আমাদের প্রাণীজ সম্পদ বিভাগ অন্যান্য রাজ্য থেকে ২০ টাকায় ভুট্টা কিনে থাকে। কিন্তু এবার তা আমাদের রাজ্যেই তৈরি হবে। যার ফলে দামও কম হবে এবং আর্থিক লেনদেন স্থানীয় বাজারেই থাকবে। পরিসংখ্যান বলছে, ত্রিপুরার ২.৭২ লক্ষ হেক্টর জমি কৃষিক্ষেত্রের জন্য উপলভ্য। যার মধ্যে বর্তমানে ২.৫৫ লক্ষ জমি চাষবাসের কাজ হচ্ছে।
উল্লেখ্য, ২০০২-০৩ সালে ত্রিপুরা খাদ্য স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য দশ বছরের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল। ২০১২-১৩ সালে মূল্যায়ন করা হয়। দেখা যায়, সেই লক্ষ্যমাত্রা ছোয়া যায়নি। অতঃপর, বিগত বামফ্রন্ট সরকার ২০২০ সালের নতুন লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিল।
এদিকে, ২০১৮ সালে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ত্রিপুরায় ক্ষমতায় আসে বিজেপি সরকার। দীর্ঘদিনের বাম দুর্গে ধস নেমেছিল গেরুয়া ঝড়ে। তারপর থেকে খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের দিকে জোর দিয়েছে বর্তমান সরকার।
সুব্রত সরকার
(৯৬৭৪৪৮২৬১৫)
Related link - #বর্ষা ২০২০, উন্নত ফলন পেতে আমন ধানের রোগপোকা (DISEASE & PEST MANAGEMENT OF AMAN PADDY) নিয়ন্ত্রণ
শ্রী পদ্ধতিতে (Sri Method- aman paddy) আমন ধান চাষে দ্বিগুণ লাভ
এই ঘাসেই (Gini Grass in Monsoon) বৃদ্ধি পাবে পশুদের দুগ্ধ উৎপাদন, বর্ষায় চাষ করুন গিনি ঘাস
Share your comments