আজ World Milk Day. ভারত বিশ্বের বৃহত্তম দুগ্ধ উৎপাদক দেশ।এ বছর ওয়ার্ল্ড মিল্ক ডে (২০২১) –এর থিম এবং ফোকাস হল - ‘Sustainability in the dairy sector with messages on nutrition’.
খাদ্য ও কৃষিক্ষেত্রের জন্য জাতিসংঘ (FAO) অধিদফতরের মাধ্যমে প্রথম ‘ওয়ার্ল্ড মিল্ক ডে’ ২০০১ সালের ১ লা জুন পালিত হয়েছিল।
শৈশবকাল থেকে দুধই আমাদের খাদ্যের এক প্রধান অঙ্গ হয়ে উঠেছে এবং সেই প্রাচীনকাল থেকেই ছোট থেকে বড় সকলে পুষ্টির জন্য আমরা দুধ পান করে থাকি। বিগত বছর আমাদের দেশে ওয়ার্ল্ড মিল্ক ডে-এর থিম ছিল "রেইস এ গ্লাস"। এই দিবসটি উদযাপনের প্রধান কারণ হ'ল দুধের স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করা এবং মানবদেহে দুধের ইতিবাচক প্রভাবগুলি সম্পর্কে আলোকপাত করা।
প্রথম থেকেই এই দিনটি পালনের একটি বিশেষ লক্ষ্য রয়েছে, তা হল অন্য পানীয়গুলির চেয়ে দুধের গুরুত্বের বিষয়টি সকলের কাছে প্রচার করা।
দিনটি পালনের উদ্দেশ্য (The purpose of the day) –
এই দিনটিতে, বিভিন্ন সংস্থা দুধের অত্যন্ত পুষ্টিকর মান সম্পর্কে আলোচনা করেন এবং প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় দুধের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে মানুষকে অবহিত করে থাকেন। বিশ্বের কয়েকটি অংশে, বিশ্ব দুধ দিবসে ছোট বাচ্চাদের বিনামূল্যে দুধের প্যাকেট দেওয়া হয়ে থাকে। কিছু দেশ এই সংক্রান্ত এমন ইভেন্টের আয়োজন করে যেখানে বিভিন্ন মানুষ অংশগ্রহণ করেন এবং দুধের দীর্ঘমেয়াদী উপকার সম্পর্কে জানতে পারেন। বিগত বছর ভারতে ‘ওয়ার্ল্ড মিল্ক ডে’ –এর থিমটি ছিল, "দুধ পান করুন: আজ এবং প্রতিদিন"। ভারতীয়রা যাতে তাদের প্রতিদিনের ডায়েটে দুধকে একীভূত করে এবং একটি স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রার দিকে এগিয়ে যায়, তা নিশ্চিত করার জন্য এটি করা হয়েছিল।
ডঃ ভার্গেস কুরিয়ান (Dr. Verghese Kurien) -
ইন্ডিয়ান হোয়াইট রেভলিউশনের জনক হিসাবে পরিচিত ডঃ ভার্গেস কুরিয়ান। ২০১৪ সাল থেকে সমগ্র ভারতে ২৬ শে নভেম্বর তাঁর জন্মদিন উদযাপিত হয়। আমুল সহ অনেক দুগ্ধ সংগঠন এই দিনটিতে সারাদেশে প্রকাশ্য অনুষ্ঠান এবং ভার্গেস কুরিয়ানের স্মরণ অনুষ্ঠান পালন করে।
দুগ্ধ ও দুগ্ধজাতীয় খাবারগুলি আমাদের স্বাস্থ্যকর জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য উত্স। এই দিনটি উদযাপন করে, ইন্ডিয়ান ডেইরি অ্যাসোসিয়েশন লক্ষ্য হল সুষম খাদ্য হিসাবে দুধের গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানো।
দুগ্ধ খাত হ'ল ভারতীয় কৃষি অর্থনীতির মেরুদণ্ড। দুগ্ধ খাত কেবল ভারতীয় অর্থনীতিতে নয়, বিশ্ব অর্থনীতিতেও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এই ক্ষেত্রটিতে জীবিকা নির্বাহের জন্য অনেকে কাজ করছেন। দুধ উৎপাদনের ক্ষেত্রে ভারত অনেক কৃতিত্ব অর্জন করেছে। তবে এই কৃতিত্ব অর্জনের সূচনার পশ্চাতে যার মহৎ প্রচেষ্টা ও উদ্যোগ রয়েছে, তিনি হলেন ড. ভার্গেস কুরিয়ান নামে একজন মালয়ালি, তিনি দুগ্ধ শিল্পকে উন্নতির শিখরে স্থাপন করেন। তিনি দুগ্ধচাষীদের আর্থিক সুরক্ষা নিশ্চিত করতে স্থানীয় অঞ্চলগুলিতে সমবায় সমিতির কার্যক্রমে আরও উন্নতি সাধন করতে সক্ষম হয়েছিলেন।
দুধে থাকা পুষ্টির তথ্য (Milk rich in nutrition) –
দুগ্ধ এবং দুগ্ধজাত যে কোন খাদ্য পুষ্টিতে পরিপূর্ণ। দুধে ক্যালসিয়াম, আয়োডিন, ফসফরাস এবং ভিটামিন বি ২, বি ১২ রয়েছে, যা বাচ্চাদের বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয়। দুধ পান করলে তা হজমে সহায়তা করে। সিরোটোনিন হিসাবে দুধে থাকা ট্রিপটোফান শরীরে শক্তি সরবরাহ করে। দুধে ৪.৮ গ্রাম স্টার্চ, ৩.৯ গ্রাম ফ্যাট এবং ৩.২ গ্রাম প্রোটিন রয়েছে। এটিতে ১২০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম এবং ১৪ মিলিগ্রাম কোলেস্টেরল রয়েছে। (এখানে স্টার্চের উপস্থিতি ল্যাকটোজ আকারে রয়েছে)। ১০০ মিলি গরুর দুধে ৬৬ ক্যালোরি রয়েছে। ১০০ মিলি গরুর দুধে ৮৭.৮ গ্রাম জল থাকে।
দুধ খাওয়ার উপকারিতা (Benefits of drinking milk) -
ওয়ার্কআউটের পরে দুধ পান করুন (Drink Milk After Workout): দীর্ঘসময় কাজ করার পর অথবা ওয়ার্কআউটের পরে আমাদের শরীরে শক্তির ঘাটতি হয়। প্রতিদিন যদি বড় এক গ্লাস দুধ পান করা হয়, তবে শরীরে একসাথে অনেক পুষ্টির পাশাপাশি শক্তিও পাওয়া যায়। দুধ আমাদের শরীরে শক্তির মাত্রা বৃদ্ধি করে। অন্যান্য সকল পানীয়ের চেয়ে এটি শ্রেষ্ঠ। প্রত্যহ রাত্রে দুধ পান করলে ঘুম ভালো হয়।
অস্থি মজবুত করে তোলে (Strengthen Bone): দুধে ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ডি, ফসফরাস এবং ম্যাগনেসিয়াম থাকে। এই সমস্ত উপাদান অস্থিকে মজবুত করে তোলে। গবেষণা অনুসারে দেখা গেছে, দুধ পান করলে বোন ফ্র্যাকচারের সম্ভাবনাও হ্রাস পায়। এটি আপনার দাঁতকেও শক্তিশালী করে তোলে।
চুল এবং ত্বকের জন্য ভাল (Hair & Skin Care): শরীরের পাশাপাশি রূপচর্চাতেও ব্যবহার করা হয় দুধ। আপনি যদি দুধ পান করতে পছন্দ না করেন, তবে এটি আপনি আপনার মুখের উজ্জ্বলতা বাড়ানোর জন্য এবং চুলের স্বাস্থ্যের যত্ন নিতেও ব্যবহার করতে পারেন। ফেসপ্যাকে অনেকেই বিভিন্ন উপায়ে দুধ ব্যবহার করে থাকেন। এটি মুখের ত্বককে কোমল করে তোলে। হেয়ার প্যাকে দুধের ব্যবহারে চুল মসৃণ এবং স্বাস্থ্যোজ্জ্বল হয়ে ওঠে।
পরিশেষে বলা যায়, ২০ বছর আগে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (FAO) প্রথম ‘ওয়ার্ল্ড মিল্ক ডে’ উদযাপন করে। এই দিবসটি স্মরণে রাখার উদ্দেশ্য ছিল বিশ্ব খাদ্য হিসাবে এবং দুগ্ধ খাতে দুধের গুরুত্বকে স্বীকৃতি দেওয়া। সেই সময় থেকে, দুধ ও দুগ্ধজাতীয় পণ্যের উপকারিতা সারা বিশ্বে প্রচারিত হয়ে চলেছে। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়, বহু মানুষ দুধের ব্যবসার সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত, এর থেকেই তারা তাদের জীবিকা নির্বাহ করেন। তাই অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেও এর যথেষ্টই গুরুত্ব রয়েছে। আর পুষ্টির যোগান হিসেবে তো দুধ শিশু থেকে বৃদ্ধ সকলের জন্যই সুষম পানীয়। প্রতিদিন খাদ্যতালিকায় রাখুন দুধ, শরীরের আভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক সৌন্দর্য দুই-ই থাকবে অটুট।
আরও পড়ুন - Spices Board Recruitment 2021: রাজ্যের মশলা গবেষণা কেন্দ্রে চলছে কর্মী নিয়োগ, জেনে নিন আবেদন
Share your comments