কৃষিক্ষেত্র একটি বৃহত এবং বিস্তৃত ক্ষেত্র, যেখানে বনায়ন, পশুপালন এবং মৎস্যজীবনের মতো আরও অনেক বিষয় অন্তর্ভুক্ত। এর মধ্যে কিছু কৃষিজ ব্যবসা কম মূলধনে করা যায়, আবার কিছু ক্ষেত্রে বিশাল পুঁজি বিনিয়োগের প্রয়োজন হতে পারে। আপনি যদি স্বল্প ব্যয়যুক্ত কৃষি ব্যবসা সম্পর্কে জানতে চান, তবে অবশ্যই এই নিবন্ধটি আপনাকে সহায়তা করবে। কৃষিক্ষেত্রে কয়েকটি ব্যবসা বেশ লাভজনক। যদি কৃষি-সম্পর্কিত ব্যবসা মনোযোগ সহকারে করা হয়, তবে আপনি এটি থেকে ভাল পরিমাণ অর্থ উপার্জন করতে পারবেন।
কৃষি ব্যবসা শুরু করতে দুটি জিনিস অপরিহার্য - আপনার কাজের ক্ষমতা এবং আপনি এই ব্যবসায় কতটা বিনিয়োগ করতে পারেন। জেনে নিন স্বল্প অর্থ বিনিয়োগে শুরু করা যায়, এমন কয়েকটি কৃষি ব্যবসা সম্পর্কে -
শীর্ষ কৃষি ব্যবসায়িক ধারণা -
১) কৃষি ফার্ম - আপনার যদি আবাদযোগ্য জমি খালি পড়ে থাকে তবে আপনি এটিতে একটি কৃষি খামার শুরু করতে পারেন। আপনার অঞ্চলে উচ্চ চাহিদা রয়েছে এমন ফসল চাষ করে/ অথবা জমি ভাড়া দিয়ে চাষ করিয়ে তা থেকে আপনি উপার্জন করতে পারেন।
২) ট্রি ফার্ম - উদ্ভিদের ব্যবসা অর্থাৎ আপনি বৃক্ষরোপণ করে তা বড় হওয়ার পর বিক্রি করে লাভ অর্জন করতে পারেন। এই ব্যবসায়, উদ্ভিদ বৃদ্ধিতে দীর্ঘ সময় লাগে কিন্তু উদ্ভিদের দাম অনেক। সুতরাং দীর্ঘ সময় লাগলেও এটি একটি ভাল কৃষি বাণিজ্য বিভাগের অন্তর্ভুক্ত।
৩) জৈব সার উত্পাদন - বর্তমানে ভার্মিকম্পোস্ট এবং জৈব সার চাষের একটি ঘরোয়া ব্যবসায় হয়ে উঠছে। এই ব্যবসা স্বল্প মূলধন বিনিয়োগে করা যেতে পারে, কেবল তার উত্পাদন প্রক্রিয়া সম্পর্কে সচেতন হওয়া উচিত।
৪) সার বিতরণ ব্যবসা - এই ব্যবসা ছোট শহর বা গ্রামাঞ্চলে বসবাসকারী লোকেরা সহজেই করতে পারেন। এই ব্যবসায়, আপনাকে বড় শহরগুলি থেকে সার কিনে গ্রামীণ অঞ্চলে বিক্রি করার পরিকল্পনা করতে হবে।
৫) শুকনো ফুলের ব্যবসা - বিগত কয়েক বছরে, শুকনো ফুলের বাণিজ্য ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে। যদি আপনার যদি খালি জমি থাকে তবে আপনি এটিতে ফুলের চাষ করতে পারেন এবং সেগুলি শুষ্ক করে ক্রাফ্ট স্টোরগুলিতে বিক্রি করতে পারেন।
৬) মাশরুম চাষ - মাশরুমের ব্যবসা এমন একটি ব্যবসা যা আপনাকে কম সময়ে আরও বেশি লাভ দিতে পারে। এটি কম ব্যয় এবং স্বল্প জায়গাতেই করা যেতে পারে। আজকাল হোটেল, রেস্তোঁরাগুলির পাশাপাশি সাধারণ বাজারেও মাশরুমের চাহিদা বেড়েছে।
৭) পোল্ট্রি - হাঁস-মুরগির খামার গত কয়েক বছরে খুব দ্রুত বর্ধনশীল একটি ব্যবসায় পরিণত হয়েছে। এটি কৃষি শিল্প ধারণার অন্তর্ভুক্ত একটি দুর্দান্ত ক্ষেত্র।
৮) হাইড্রোপনিক খুচরা দোকান - হাইড্রোপোনিক্স প্রযুক্তির ব্যবহার আজকাল খুব দ্রুত বাড়ছে। এতে মাটি ছাড়াই চাষ করা হয়। এই ব্যবসায়, আপনি এক জায়গায় হাইড্রোপনিক চাষের প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম বিক্রয় করতে পারেন।
৯) জৈব গ্রীণহাউস - জৈব গ্রীণহাউস ব্যবসায়ের বৃদ্ধিও যথেষ্ট ভাল। কারণ জৈব পদ্ধতি দ্বারা উত্থিত পণ্যগুলির চাহিদা এখন উত্তরোত্তর বাড়ছে। আগে এই ব্যবসায় ছোট পরিবার পরিচালিত খামারগুলিতে করা হত, তবে ক্রমবর্ধমান চাহিদা নিয়ে লোকেরা এখন জৈব গ্রীণহাউসগুলি তৈরির জন্য জমি কিনছে।
১০) মৌমাছি পালন – মধুর উপকারিতা সম্পর্কে সকলেই অবগত। আর এখনকার দিনে খাঁটি মধুর চাহিদা ও দাম দুইই প্রচুর। বাইরের বাজারেও এর চাহিদা বাড়ছে, তাই মৌমাছি পালনও একটি লাভজনক ব্যবসা। এই ব্যবসায়ের জন্য অনেক জায়গায় প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়।
১১) শামুক চাষ - কৃষি ব্যবসায় শামুক চাষ একটি ভাল ব্যবসা। শামুকের খোলস থেকে তৈরী হয় চুন, যা মাছ চাষে ব্যবহৃত হয়। এছাড়াও শামুক জলজ পালনে এবং অন্যান্য ক্ষেত্রেও ব্যবহার করা হয়। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে স্বল্প সময়ে এর থেকে ভাল লাভ করা যায়।
১২) ফলমূল ও শাকসবজি রফতানি - এটি এক ধরণের রফতানি ব্যবসা যেখানে আপনাকে স্থানীয় খামারগুলি থেকে ফল এবং সবজি কিনতে হবে এবং বাইরে সরবরাহ করতে হবে।
১৩) ফলের রস উত্পাদন - ফলের রস উত্পাদন প্রক্রিয়াটি বেশ সহজ এবং খুব অল্প মূলধন বিনিয়োগের মাধ্যমেই শুরু করা যেতে পারে। এই ব্যবসাটির বাজারে উচ্চ চাহিদা রয়েছে। এই ব্যবসাটি শুরু করার জন্য, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার দিকে নজর রাখা বাধ্যতামূলক।
১৪) ছাগল পালন - এর মাংসের চাহিদা বেশি হওয়ায় ছাগল পালন ব্যবসা বিশ্বজুড়ে খুব জনপ্রিয় এবং লাভজনক। সুবিধাজনক দিকটি হল, ছাগল পালন কম মূলধন বিনিয়োগে শুরু করা যায় এবং বিক্রির সময়ে এর ভালো মূল্য পাওয়া যায়।
১৫) বেবীকর্ণ চাষ - বেবীকর্ণ সর্বাধিক বহুমুখী ফসল হিসাবে আবির্ভূত। এই উদ্ভিদ থেকে বছরে তিন-চারবার ফসল পাওয়া যায়। দিন দিন এর চাহিদা বাড়ছে। ভাল মানের বীজ নির্বাচন করে এর বাম্পার ফলন পাওয়া সম্ভব এবং তা ভালো দামে বাজারে বিক্রি করে আপনি লাভবান হতে পারবেন।
১৬) পট্যাটো পাউডার ব্যবসা - খাদ্য শিল্পে ব্যাপকভাবে পট্যাটো পাউডার ব্যবহার করা হয়। এটি এখন সব ধরণের খাদ্যে ব্যবহৃত হচ্ছে। খাবারে গ্রেভি এবং স্যুপ তৈরিতেও এটি ব্যবহৃত হয়। সুতরাং এই ব্যবসা এখন যথেষ্ট জনপ্রিয় এবং লাভজনক।
১৭) মশলা প্রক্রিয়াকরণ - জৈব মশলার চাহিদা দেশ-বিদেশে সর্বত্র। এটির প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং প্যাকেজিং প্রক্রিয়া খুবই সহজ এবং কম মূলধন বিনিয়োগের মাধ্যমে শুরু করা যেতে পারে।
১৮) সয়াবিন চাষ - সয়াবিন থেকে অনেক ধরণের খাবার আইটেম যেমন সয়া মিল্ক, সয়া আটা, সয়া সস, সয়াবিন তেল ইত্যাদি তৈরি করা হয়। আপনার যদি কৃষিক্ষেত্রের খালি জমি থাকে তবে আপনি এটি চাষ করে লাভ অর্জন করতে পারেন।
১৯) সার্টিফাইড সীড সেলার - বর্তমান যুগে সার্টিফাইড সীড সেলিং (প্রত্যয়িত বীজ বিক্রয়) একটি প্রচলিত ব্যবসা। এটি শুরু করার জন্য খুব বেশি মূলধন বিনিয়োগের দরকার নেই। এই ব্যবসা করেও আপনি ভালো অর্থ উপার্জন করতে পারবেন।
২০) দুগ্ধ ব্যবসা - দুগ্ধের পাশাপাশি দুগ্ধজাত পণ্যের চাহিদা সর্বদা বেশি। তাই নিশ্চিতভাবে বলা যায় যে, ডেইরি ব্যবসা ভারতে সবচেয়ে লাভজনক কৃষি ব্যবসা। দুগ্ধ ব্যবসা শুরু করার জন্য সরকার থেকে মুদ্রা লোণ প্রকল্পে লোণও পাওয়া যায়। সুতরাং, এই ব্যবসা করে আপনি সহজেই লাভবান হতে পারবেন।
Related link - শূন্য বিনিয়োগে শুরু করুন আধার কার্ডের ফ্র্যাঞ্চাইজি (Aadhaar card franchise) ব্যবসা স্বল্প সময়ে প্রচুর অর্থোপার্জন
এই তিনটি উপায়ে বাড়িতে বসেই উপার্জন করুন (Earn Money) প্রচুর টাকা
Share your comments