ঝুঁকি ছাড়া অল্প পুঁজিতেই অধিক লাভজনক ব্যবসা এটি। অন্য কাজের পাশাপাশি এটি সহজেই করা যায় এবং বাড়িতে বসেই করতে পারেন। বর্তমনে ঔষধি গাছের (Medicinal Plant) বাণিজ্যিক চাহিদা ক্রমশ বাড়ছে | বাড়িতে ছাদের টবে ও বাগানে ঘৃতকমল, তুলসী, বাসকসহ বিভিন্ন ঔষধি গাছ লাগাতে পারেন। এক মাস থেকে এক বছরের মধ্যে এসব গাছই হবে আপনার আয়ের উৎস।
আর্থিক বিশ্লেষণে ভেষজ উদ্ভিদের চাষ (Medicinal Plant Cultivation) অন্য যেকোনো কৃষির চেয়ে অনেক বেশি লাভজনক। দেশ-বিদেশে ভেষজ উদ্ভিদের ব্যাপক চাহিদা থাকার কারণে কৃষকদের পকেট ভরবে অনায়াসে | ভেষজ উদ্ভিদ চাষ অপেক্ষাকৃত কম শ্রমসাধ্য। ভেষজ উদ্ভিদে খুব বেশি পরিচর্যা প্রয়োজন হয় না | অধিকাংশ ভেষজ উদ্ভিদ চাষে কৃত্রিম কীটনাশক ও সার প্রয়োজন হয় না। সঠিক পরিচর্যার মাধ্যমে এই চাষ করা যায় | বর্তমানে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে গজিয়ে উঠেছে হারবাল কোম্পানি | যাদের একমাত্র চাহিদা ভেষজ কাঁচামাল যার সরবরাহ চাহিদার তুলনায় কম | তাই এই ব্যবসা আপনার মুনাফা বাড়াতে অনেকটাই সক্ষম |
কিভাবে শুরু করবেন এই চাষ:
চাহিদা অনুযায়ী কিছু ঔষধি গাছ বেঁচে নিতে হবে | ঘৃতকমল, উলটকম্বল, পদ্মগুরুস, তুলসী ও বাসকের চাষ অল্প জায়গায়ই করা সম্ভব। উৎপাদনও হয় অল্প সময়ে। এসব গাছের ফলন বিক্রি করা যায় লাগানোর এক মাসের মাথায় | আর তুলসী, পাথরচুনা, পাথরকুচি, জিনসেং, অশ্বগন্ধা, বাসক, চিরতার গাছ বিক্রি হয়। এদের চাষও খুব সহজ। তবে শিমুলের মূল, বেল, আমলকী, হরীতকী, বয়রার মতো ঔষধি গাছের ফলন পেতে বেশ সময় লাগে। তাই দীর্ঘমেয়াদি চিন্তা থাকলে এগুলো রোপণ করা যেতে পারে |
কিছু ঔষধি গাছ ও চাষের পদ্ধতি :
থানকুনি লতা:
এটি হলো একধরণের বর্ষজীবী লতা। থানকুনি মাটির উপর লতা বেয়ে বেড়ে ওঠে এবং লম্বা বৃন্তের উপর গোলকার খাঁজকাটা কিনারাযুক্ত পাতা উপর দিকে মুখ করে থাকে। গ্রীষ্মমন্ডলীয় দেশের আর্দ্রা এলাকায় থানকুনি ভালো হয়। সাধারণত পুকুরপাড়ে এ লতা বেশি জন্মাতে দেখা যায় |বসন্তকালে থানকুনি লতার ফুল আসে এবং গ্রীষ্মতকালে ফল পাকে। বীজের মাধ্যমেও অঙ্গজ জনন উভয়ভাবেই থানকুনির বংশবিস্তার হয়। প্রতিটি গিট বা node থেকে শিকড় বের হয় এবং শিকড়সহ লতা এনে আর্দ্র জমিতে রোপন করলেই থানকুনি জন্মে। তবে মাটিতে যেন জলাবদ্ধতা না থাকে |
ঘৃতকুমারী বা অ্যালোভেরা (Aloe Vera):
বর্তমান সময়ে এই ভেষজ গাছের চাহিদা প্রচুর | একটি গাছ থেকে ৬০ থেকে ৭০ টির মতো পাতা বিক্রি করা যায়। বিশেষ কোন পরিচর্যার দরকার হয় না। বছরের যেকোনো সময় ঘৃতকুমারীর চারা লাগানো যায়। জুন/আষাঢ় মাসের শুরুতে গাছ লাগালে তা বাড়ে সবচেয়ে তাড়াতাড়ি। তবে শীত ও বর্ষাকালে চারা না লাগানো ভালো। দোঁ-আশ ও অল্প বালু মিশ্রিত মাটিতে গাছের বৃদ্ধি ভালো হয় । সুনিষ্কাশিত জমি যেখানে জল জমেনা, সেখানে এই গাছের ফলন ভালো হয় | ছায়া নয় বরং এই গাছের জন্য দরকার সারা দিন রোদ | রাসায়নিক স্যারের পরিবর্তে শুধুমাত্র জৈব সার প্রয়োগে এই গাছের ফলন ভালো হয় |
পুদিনা:
পুদিনা একটি অত্যন্ত উপকারী ভেষজ উদ্ভিদ। পুদিনার সাধারণ ইংরেজি নাম Mint। সুগন্ধি রন্ধনকার্যে ও ভেষজ ঔষধ তৈরিতে এর ব্যবহার অপরিসীম | বিভিন্ন ধরণের আবহাওয়ায় বিভিন্ন ধরণের পুদিনার সহনশীলতা রয়েছে। তবে, আর্দ্র আবহাওয়া ও আর্দ্র মাটিতে ভাল জন্মে। চাষাবাদের জন্য পুদিনার সবচেয়ে কমন ও জনপ্রিয় জাতসমূহ হচ্ছে পিপারমিন্ট, স্পিয়ারমিন্ট ও অ্যাপেলমিন্ট। সাধারণত নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে বসানো হয় ও মার্চ মাসে সংগ্রহ করা হয় |
আরও পড়ুন - জানুন ব্রাসেল স্প্রাউট বা মিনি বাঁধাকপির চাষাবাদের নিয়ম
নিম চাষ পদ্ধতি:
নিম একটি অভূতপূর্ব ঔষধি গাছ। নিম বহুবর্ষজীবী মাঝারি ধরনের চিরহরিৎ বৃক্ষ। সাধারণত আামদের দেশে বর্ষার শুরুতে জুন থেকে আগস্টের মধ্যে বীজ সংগ্রহ করা হয়। তবে এর আগে বা পরেও বীজ সংগ্রহ করা যায় | বেলে, দো-আঁশ মাটিতে নিমগাছ ভালো হয় | গাছের গোড়ায় যাতে জল না জমে সেদিকে নজর রাখতে হবে | চারা লাগানোর আগে কাণ্ড মূল প্রয়োজনমতো ছাঁটাই করে লাগালে ভালো ফল পাওয়া যায় |
নিবন্ধ: রায়না ঘোষ
আরও পড়ুন - বেকার সমস্যার সমাধান, স্বল্প মূলধনে চাষ করুন অ্যাভোকাডো
Share your comments