বর্ষা প্রায় আগত, এসময় কৃষকেরা খারিফ শস্য (Kharif Crops) চাষে বিশেষ নজর দেন৷ ধান, অড়হর, সোয়াবিন সহ বিভিন্ন চাষ হয়ে থাকে বিভিন্ন রাজ্যে৷ তবে এসব ছাড়াও, ঔষধি গুন সমৃদ্ধ (Medicinal Crops) গাছ চাষে বর্ষায় যে কতটা লাভ হতে পারে সে সম্পর্কে অনেকেই হয়তো জানেন না৷ বিশেষ করে বর্ষাকালেই এমন বহু ঔষধি গুন সম্পন্ন গাছ রয়েছে যাদের চাষ হতে পারে লাভজনক৷
এই বিষয়ে সঠিক তথ্য না পাওয়ার কারণেই অনেকের কাছে বিষয়টি অধরা৷ চলুন এই প্রতিবেদনে এমনই কিছু গাছ নিয়ে আলোচনা করা যাক যা কৃষকদের জন্য হতে পারে লাভদায়ক৷ তবে সঠিক সময়ে, সঠিক রোপন, সেচ, কীটনাশক দেওয়ার প্রয়োজন এগুলিতে, না হলে এর ওপর খারাপ প্রভাব পড়তে পারে৷
চাষ পদ্ধতি:
শতমূলী- শীত বাদ দিয়ে বছরের যে কোনও সময়ে এই গাছের চাষ করতে পারেন৷ বর্ষাকালে এই চারা রোপন করলে সহজেই তা বেড়ে উঠতে থাকে৷ তবে বীজ বপনের আগে বীজ ১ দিন পর্যন্ত হালকা গরম জলে ভিজিয়ে রাখতে হয়৷
অশ্বগন্ধা- বর্ষায় এর চাষ ভালো৷ জুন থেকে অগস্ট পর্যন্ত এর চাষ করতে পারেন৷ এর বিভিন্ন জাত রয়েছে৷ উন্নত মানের গাছের চাষে কৃষকের লাভের পরিমাণও বৃদ্ধি পেতে পারে৷ উল্লেখ্য, প্রতি হেক্টরে ৫ কিলোগ্রাম বীজ ব্যবস্থা করতে হবে৷ যদি কেউ ১ হেক্টর জমিতে অশ্বগন্ধার চাষ করতে চায় তাহলে তাকে প্রায় ৫০০ বর্গমিটারে নার্সারি তৈরি করতে হবে৷ প্রায় ১ সেন্টিমিটার গভীরে বীজ বপন করতে হবে৷
যষ্টিমধু- জুলাই থেকে অগস্ট পর্যন্ত এর চাষ করা হয়৷ আর তাই জুন থেকেই এর প্রস্তুতি শুরু করে দেন কৃষকেরা৷ জলনিকাশি ব্যবস্থা উচ্চমানের হওয়া প্রয়োজন এই গাছ চাষের জন্য৷ মনে রাখতে হবে এর চাষের আগে জমিতে কমপক্ষে ১৫ টন গোবর সার দেওয়া প্রয়োজন, এরপরেই এটি চাষ করা উচিত৷
ঘৃতকুমারী- এর ভালো উৎপাদনের জন্য জলনিকাশি ব্যবস্থা ঠিক রাখতে হবে৷ এই ধরনের ঔষধি গুনসম্পন্ন গাছ শীতকাল বাদ দিয়ে যে কোনও সময় চাষ করতে পারেন৷ বর্ষাকালে দূরত্ব রেখে বীজ বপন করতে হবে৷ কম সময়ের মধ্যেই ব্যবহারোপযোগী হয়ে ওঠে এগুলি৷
অগ্নিশিখা বা কলিহারি- এটি চাষের জন্য কৃষকেরা জুন মাসেই প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন৷ জুলাইয়ে ভালো বৃষ্টিতে এর চাষ শুরু করা যেতে পারে৷ উল্লেখ্য, ১ হেক্টর জমির জন্য প্রায় ১০ ক্যুইন্টাল কন্দের প্রয়োজন৷ এটি চাষের আগেও জমিতে গোবর সার প্রয়োগ করে তা প্রস্তুত করে নিতে হবে৷
তুলসী (Tulsi) –
এই গাছ রাজ্যে তথা দেশে প্রায় ঘরে ঘরে দেখতে পাওয়া যায়৷ এর ঔষধি গুন অতুলনীয়৷ ভারতে বিভিন্ন ধরণের তুলসীর উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়৷ এই তুলসীতে রয়েছে ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম, আয়রন, এবং ভিটামিন সি এর মতো মূল্যবান উপাদান। এই জাতের তুলসীর তেল, মশার প্রতিরোধক এবং ম্যালেরিয়ার প্রতিষেধক তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। এছাড়াও রাম তুলসী, বন তুলসী, কাপুর তুলসী প্রভৃতি বিভিন্ন প্রকারের গাছও রয়েছে৷ এগুলির প্রত্যেকটিরও কিছু না কিছু ঔষধি গুন রয়েছে, যার জন্য এই গাছের এতো চাহিদা৷
সাধারণত এপ্রিল-মে মাসে এর চারা রোপন করা হলেও, তুলসী সারা বছরই চাষ করা যেতে পারে৷ বাড়িতে খুব কম জায়গার মধ্যে গাছ লাগানো যেতে পারে৷ চারা রোপণের ৩ মাস পরে ফলন শুরু হয়। ফুল ফোটার সময়কালে ফসল সংগ্রহ করা হয়। বাড়ির ছাদে, বা টবে সহজেই এই গাছ লাগানো সম্ভব৷
নিম চাষ পদ্ধতি:
নিম একটি অভূতপূর্ব ঔষধি গাছ। নিম বহুবর্ষজীবী মাঝারি ধরনের চিরহরিৎ বৃক্ষ। সাধারণত আামদের দেশে বর্ষার শুরুতে জুন থেকে আগস্টের মধ্যে বীজ সংগ্রহ করা হয়। তবে এর আগে বা পরেও বীজ সংগ্রহ করা যায় | বেলে, দো-আঁশ মাটিতে নিমগাছ ভালো হয় | গাছের গোড়ায় যাতে জল না জমে সেদিকে নজর রাখতে হবে | চারা লাগানোর আগে কাণ্ড মূল প্রয়োজনমতো ছাঁটাই করে লাগালে ভালো ফল পাওয়া যায় |
আরও পড়ুন - GI Certified Jalgaon Bananas: ভারত থেকে GI স্বীকৃত জলগাঁও কলা রপ্তানি হচ্ছে দুবাইয়ে