ফল ও সব্জির ব্যবহারের উপর নির্ভর করছে পশুপাখিদের হত্যা বন্ধ করার ধারণা যা কিনা পশুজ খাদ্য ও পরিধান ব্যবহারকারীদের প্রতি সচেতনতা বৃদ্ধি করছে। এই ধারণা যে শুধুমাত্র ভারতেই প্রচলিত রয়েছে তা নয় পশ্চিমী দুনিয়াতেও এই নিয়ে চর্চা চলছে।
সারা বিশ্বে মানুষজন এখন মাংসকে তাদের খাদ্যতালিকা থেকে কম করছে, এইকারণে ধরে নেওয়া যায় পশু ও তাদের চামড়া ও মাংস অনেকবেশী সুরক্ষিত। যদি পশুর চামড়া না পাওয়া যায় তাহলে পশুর চামড়া, জ্যাকেট, ব্যাগ ইত্যাদি নির্মাতারা এর জন্য বিকল্প রাস্তা দেখবে।
সারা বিশ্বে এখন আবর্জনা ও ফেলে দেওয়া জিনিষগুলিকে নিয়ে অনেক ভাবনাচিন্তা করা হচ্ছে যে কিভাবে এই বস্তুগুলিকে নিয়ে নতুন সামগ্রী বানানো যায়, এর জন্য বিভিন্ন কৃষি বিজ্ঞানীরা উদ্যানপালন ও কৃষি বর্জ্যের সাহায্যে শক্তি উৎপাদনের কাজে নিরন্তর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
বর্তমানে আনারসের পাতা ও অব্যবহৃত খোসাকে ব্যবহার করা হচ্ছে এই ধরণের বস্তু উৎপাদন করার জন্য। আনারস এমনি এক ফল যার বিবিধ উপকারিতা রয়েছে। সারা বিশ্বে আনারসের উৎপাদন প্রায় ২৪.৮ মিলিয়ন টন। আনারসের ভোজ্য অংশ অনেক কম তাই আনারসের থেকে নিষ্কাসিত বর্জ্যপদার্থের পরিমাণ প্রায় এর উৎপাদনের সমান হয়ে থাকে। দক্ষিণ আমেরিকার জাতীয় ফল এই আনারস। স্পেনীয় ও পোর্তুগীজ নাবিকরা এই ফলের উৎপাদন সম্পর্কীত বিষয়বস্তু সারা বিশ্বের কাছে প্রকাশিত করে। হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জে প্রথম বাণিজ্যিকভাবে আনারস উৎপাদিত হয়। এই মুহূর্তে সারা বিশ্বে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদিত আনারসের পরিমাণ ২৪.৮ মিলিয়ন টন।
আনারসের একটি ব্যাতীক্রমী রসালো ফল যার মধ্যে ক্রান্তীয় মাদকতা ও স্বাদ রয়েছে, যা এর মিষ্টতা ও গন্ধে প্রতিভাত হয়। আমেরিকায় কলার পর উৎপাদনে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে আনারস। আনারসের উৎপাদন প্রক্রিয়া শুরু হবে মার্চ মাস থেকে উৎপাদন চলবে জুন মাস পর্যন্ত, এবং সারা বিশ্বের বাজারে সারা বৎসর ধরে আনারস পাওয়া যাবে।
আরও পড়ুন সুপ্রীম কোর্ট Monsanto-এর পেটেন্টের অধিকার অনুমোদন করেছে
আনারস হল একটি যৌগিক ফল, অনেক ফুল একসাথে নিকেষ হয়ে তৈরী হয় একটি আনারস। আসলে আনারস হলো অনেকগুলি ফুলের দ্বারা তৈরী ছোট ছোট ফলের সমাহার। এই একেকটি ছোট ছোট ফলকে আমরা চিহ্নিত করতে পারি ‘চোখ’ দিয়ে, এই শক্ত পাকানো চোখ গুলি দেখা যায় আনারসের বহিঃফলত্বকের উপর। এই ফল অনেকটা জটিল চোঙাকৃতি আকারের হয়। এর ফলত্বক হয় আঁশযুক্ত, সবুজ, বাদামী, ও হলুদ রঙের এর পাতাগুলি ফলের মাথার উপড় চূড়ার মতো থাকে।এর ফলের রঙ হয় হলুদ কিন্তু উদ্ভিজ্জ তন্তুতে ভরপুর থাকে। পাতার রঙ সবুজাভ হলুদ হয়। এই ফলের মিষ্টতা সবথেকে বেশি থাকে এর নীচের অংশে। এই অংশের রস যেমন সুন্দর ততটাই কোমল।
বর্তমানে হুগো বস নামক একটি সংস্থা পুরুষদের ব্যবহারের জন্য একধরণের ভেগান জুতো তাদের সংগ্রহের তালিকায় রেখেছে। এই সংস্থাটি এই ধরণের জুতো তৈরির জন্য আনারসের অব্যবহৃত খোসাকে ব্যবহার করেছে।এখন যা জীবনযাত্রার ঝোঁক তাতে দেখা যাচ্ছে ফলের কোনো না কোনো অংশের ব্যবহার করা হচ্ছে। তবে এই বিশ্ব প্রসিদ্ধ জুতো নির্মাতাদের এই উদ্ভাবনী চমক বিশ্ববাজারে বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। এতে পরিবেশের ও পারিপার্শ্বিক জীব জগতের কোনোরূপ ক্ষতি সাধন না করেই মানুষের ব্যবহার উপযোগী পণ্য সামগ্রী উৎপাদন করা সম্ভব হয়েছে। দক্ষিণ জার্মানীর সংস্থা হুগো বস ইতিমধ্যেই আনারসের খোসার তৈরী জুতো বিক্রিও শুরু করে দিয়েছে।
এই সময়ে বিভিন্ন প্রযুক্তির ব্যবহার করে ফল ও সবজি থেকে তন্তু নিষ্কাশনের কাজ শুরু করে দেওয়া হয়েছে এবং দেখা যাচ্ছে এইসব তন্তুসমবায়ে উৎপাদিত বস্তুসমূহ অনেকবেশী জনপ্রিয় হচ্ছে, ফলে মানুষের মধ্যে প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে সৃষ্ট বস্তুর কদর উত্তোরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। আনারসের খোসা দিয়ে দ্রব্য উৎপাদন বিগত কয়েক বৎসর ধরে চালু রয়েছে ফলে এই ফ্যাসনের দুনিয়াতে তাদের দেখা পাওয়াটা খুবই স্বাভাবিক।
হুগো বস এর বক্তব্য অনুসারে তারা উপকূলীয় মানুষের জীবন ও এখানে ঘুরতে আসা পর্যটকদের পছন্দ বুঝতে পেরেছেন। আসলে উপকূলীয় জীবনযাত্রায় আনারস একটি অবিচ্ছেদ্য অংগ, আর আমরা এই ফল্টি সম্বন্ধে একেবারেই অপরিচিত নই, এমনকি ক্রিসমাস পার্টিতে কক্টেল পার্টিতে আনারসের যথেচ্ছ ব্যবহার হয়ে থাকে, তাই ভাবলাম ক্রিসমাস ট্রির সাথে সাথে আরও একটি পরিবেশবান্ধব গাছের সদব্যবহার করা যায়, এই ভেবেই আমরা মানুষের জন্য এই ফলের সর্বোত্তম ব্যবহার করছি।
এই জুতোর উপাদান তৈরির জন্য আমরা আনারসের পাতা থেকে একধরণের তন্তু বের করেছি এবং সেগুলিকে প্রযুক্তির ব্যবহার করে প্রক্রিয়াকরণ করেছি যা এখন ওয়েবসাইট অনুসারে খুবই কোমল ও স্থিতিস্থাপক হয়ে থাকে এবং পরীক্ষামূলকভাবে এটি খুব টেঁকসই। হুগো বস খুব সাম্প্রতিক খুব সংখ্যক পুরুষ মানুষের পরিধানযোগ্য জুতো বানিয়েছে, যার মধ্যে আনারসের পাতার তন্তু ছাড়াও আছে পুনঃ ব্যবহৃত প্লাস্টিক, জৈব উপায়ে উৎপাদিত তুলো, এবং উদ্ভিজ্জ রঙ। এই জুতোর সামনের দিকটি খুব সূচালো এবং এই জুতো চারটি রঙে বর্তমানে পাওয়া যাচ্ছে, এবং এতে পা গলানোর জন্য ক্রেতাকে ৩৪৮ ডলার খরচ করতে হবে।
- প্রদীপ পাল (pradip@krishijagran.com)
Share your comments