
আদা এই মশলা ফসলটির প্রায় সকল বাঙালীদের রান্নাঘরেই দেখা মেলে। আদা, গুণের দিক থেকে যেমন এর জুড়ি মেলা ভার, তেমনই ব্যবসায়িক দিক থেকেও এটির চাষ বেশ লাভজনক৷ অনেক মশলার মাঝে আদার মূল্যই বুঝিয়ে দেয় এর চাহিদা এবং বিশেষত্বের বিষয়টি৷ বাড়িতে অনেকে অনেক কিছুই চাষ করেন যত্ন নিয়ে৷ কিন্তু জানেন কি খুব কম পরিশ্রমেই অর্থকরী ফসল আদা চাষ সম্ভব৷ এর জন্য খুব বেশি জায়গাও প্রয়োজন হয় না৷
এর সহজ চাষের পদ্ধতি সম্পর্কে উল্লেখ করবো, তবে তার আগে জেনে নেওয়া প্রয়োজন আদার গুণাগুণ সম্পর্কে৷
আদার গুণাগুণ (Health Benefits) -
আদার ভেষজ গুণ অগণিত৷ জিঙ্ক, লবণ, ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম প্রভৃতি বিভিন্ন উপাদানে ভরপুর আদা আমাদের শরীরের জন্য খুবই প্রয়োজনীয়৷ খাদ্যে মশলা হিসেবে হোক বা পানীয়তে অথবা ওষুধ বা সুগন্ধি তৈরি, বিভিন্ন কাজে লাগে এই আদা৷ গ্যাস্ট্রিক-এর সমস্যা কমাতে হোক বা ব্যাথা কমাতে আদা অনেকেই খেয়ে থাকেন৷ আদায় উপস্থিত অ্যান্টি-ব্যাকটিরিয়াল উপাদান শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে৷ আদাতে শরীরে রক্তপ্রবাহের মাত্রা ঠিক থাকে৷ খিদে বাড়াতে এবং বমি বমি ভাব কমাতে আদা খান অনেকে৷ সর্দি-কাশি কমাতেও আদার টুকরো মুখে রাখেন৷ এছাড়া, বদহজম, আমাশয়, পেট ফাঁপার মতো অসুবিধাও দূর করে এটি৷ পেট পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে৷ অনেকেই গলা পরিষ্কার রাখতে আদাজল বা আদার টুকরো খান৷ নিয়মিত আদা খেলে ত্বক, চুলের ঔজ্জ্বল্য বাড়ে৷ গুণে সমৃদ্ধ আদা আমাদের সঙ্গে ওতোপ্রোতভাবে জড়িয়ে৷ তাই লকডাউনে ইচ্ছে হলে বাড়িতেই চাষ করতে পারেন আদা৷
আদা চাষের পদ্ধতি (Cultivation Procedure) –
সাধারণত চৈত্র থেকে বৈশাখের মধ্যে আদা চাষ করলে ফলন ভালো হওয়ার সম্ভাবনা থাকে৷ বেলে-দোআঁশ বা এঁটেল দোআঁশ মাটিতে আদা চাষের উপযুক্ত সময়৷ তবে আদার ফলন অনেকাংশে বীজের আকারের উপর নির্ভর করে।
আদা চাষের জন্য মাটি ঝুরঝুরে হতে হবে, যাতে তাতে জল না জমে যায়৷ বীজ আদার আকার বড় হলে ফলন বেশি হয়। প্রথমে লম্বা টব বা প্লাস্টিকের পাত্রে সমান পরিমাণ মাটি এবং জৈব সার মিশিয়ে নিতে হবে৷ মাঝারি সাইজের টবে কমপক্ষে ১০-১৫ গ্রামের ২টি আদার কন্দ রোপন করা যেতে পারে৷ কন্দ সরাসরি টবে রোপন করতে পারেন, অথবা এই কন্দ ভিজে বালিতে ১-২ দিন রেখে দিলে অঙ্কুরোদগম হলে, এরপর এটি টবে দিলে সময় আরেকটু কম লাগে৷ তবে অতিরিক্ত জল যাতে বের হয়ে যায় তার জন্য টবের নীচে একটি ছিদ্র করে রাখতে হবে৷
যত্ন -
এর জন্য উষ্ণ-আর্দ্র জলবায়ু প্রয়োজন৷ ছায়াযুক্ত স্থানে এই টব রাখতে হবে৷ টবে আদা চাষে খুব বেশি যত্নের প্রয়োজন হয় না৷ তবে আগাছা হলে তা সাবধানে পরিষ্কার করে দিতে হবে৷ জল দিতে হবে ২-৩ দিন পর পর৷ কম পরিমাণে৷ তবে আদা চাষে জৈব সার প্রয়োজন হয়৷
আরও পড়ুন - স্বল্প খরচে ধান চাষ এবং শত্রুপোকা নিয়ন্ত্রণ
প্রায় দু তিন মাস পর গাছ হবে৷ আদা লাগানোর থেকে প্রায় ৮-৯ মাস পরে ফসল তোলা যেতে পারে৷ সময় মতো গাছ টেনে তুললে নীচে দেখতে পাবেন আদা ব্যবহারের উপযোগী হয়ে উঠেছে৷ আপনি বেশি পরিমাণে চাষ করতে পারলে তা বিক্রির মাধ্যমে অর্থও উপার্জন করতে পারবেন৷ অথবা আদা কেনার থেকে টাকা সাশ্রয়ও করতে পারবেন৷ শরীরের জন্যও যেমন এটি উপকারী, তেমনই অর্থকরীও৷
আরও পড়ুন - অ্যারেকা নাট উদ্ভিদে পরিচর্যা ও রোগ পোকা নিয়ন্ত্রণ
Share your comments