জুঁই-এর মতন সুন্দর, মন মাতানো সুগন্ধি ফুল খুব কমই আছে। এই ফুল বাঙালিদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয়। এই গাছগুলির উচ্চতা ১০-১৫ ফুট পর্যন্ত হয়। এর পাতা চিরসবুজ যা কিনা আড়াই ইঞ্চি লম্বা, সবুজ ও সরু কান্ডযুক্ত। সাদা রঙের এই ফুল প্রধানত মার্চ থেকে জুন মাসের মধ্যে ফোটে। জুঁই ফুল মূলত মালা তৈরির জন্য, ফুল সজ্জায় ব্যবহৃত হয়। এই ফুলটির সুগন্ধের কারণে এটি আতর, সাবান, ক্রিম, তেল, শ্যাম্পু তৈরিতেও ব্যবহৃত হয়। এই ফুলের যেহেতু বাজারে সারাবছরই চাহিদা থাকে, তাই এই ফুল চাষে কৃষকরা প্রচুর অর্থ লাভ করতে পারেন।
মাটি (Soil)
যেকোনও মাটিতে জুঁই গাছের চাষ করা সম্ভব৷ তবে জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ মাটি থেকে শুরু করে বেলে দোআঁশ মাটিতে জুঁই-এর ফলন ভালো হয়। বেলে দোআঁশযুক্ত মাটিতে জল নিষ্কাশনের ভালো ব্যবস্থা থাকলে, এই ফুল খুব ভালোভাবে ফুটতে পারে। মাটিতে গোবর সার ভালো ভাবে মিশিয়ে নিলে এই ফুলের চাষ ভালো হয়।
জমি তৈরী (Land Preparation)
চাষ শুরু করার আগে জমিকে আগাছামুক্ত করে নিতে হবে। এক-দু’টি প্রাথমিক চাষ দিলে জমি সহজেই আগাছামুক্ত হবে। লাঙল করার পরে গর্তগুলি রোপণের এক মাস আগে ৩০ ঘনসেমি আকারে প্রস্তুত করা হয় এবং সূর্যের আলোর নিচে রেখে দিতে হবে। জমি তৈরির সময় ১০ কেজি পরিমাণের গোবর সার মাটির সাথে ভালো ভাবে মিশিয়ে দিতে হবে।
রোপণের সময় (Time of planting)
জুন থেকে নভেম্বর মাস চারা রোপনের আদর্শ সময় বলে চাষিদের কাছে বিবেচিত হয়।
সার প্রয়োগ (Fertilizer)
জমি তৈরির সময়, নাইট্রোজেন ৬০ গ্রাম প্রতি উদ্ভিদ, পটাশিয়াম ১২০ গ্রাম প্রতি উদ্ভিদ এবং ফসফরাস ১২০ গ্রাম প্রতি উদ্ভিদ আকারে সারের মিশ্রণ প্রয়োগ করতে হবে। এই সারের মিশ্রণটি সাধারণত দুটি ভাগে ভাগ করতে হবে। প্রথম ভাগটি জানুয়ারী মাসে দিতে হবে এবং দ্বিতীয় ভাগটি জুলাই মাসে দিতে হবে। অতিরিক্ত জৈব সার হিসাবে, নিমের খোল, সরিষার খোল ইত্যাদি দেওয়া খুবই ভাল। এদেরকে ১০০ গ্রাম প্রতি উদ্ভিদে দেওয়া হয়। ফুলের ফলন বাড়াতে জিঙ্ক ০.২৫% এবং ম্যাগনেসিয়াম ০.৫% হরে স্প্রে করতে হবে। লৌহের ঘাটতি থেকে রক্ষা পেতে, মাসিক বিরতিতে ফেরাস সালফেটের বড়ি ৫ গ্রাম প্রতি লিটারে স্প্রে করতে হবে।
আগাছা দমন (weed management)
আগাছা দমন প্রত্যেক চাষের ক্ষেত্রেই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রোপণের ৩-৪ সপ্তাহ পরে প্রথম জুঁই চাষের জমির আগাছা তোলা উচিত, তারপরে প্রতি ২-৩ মাস অন্তর একবার করে আগাছা পরিষ্কার করতে হবে।
সেচ (Irrigation)
ফুলের যথাযথ বৃদ্ধি এবং বিকাশের জন্য সময়ের ব্যবধানে সেচ দেওয়া প্রয়োজন। গ্রীষ্ম কালে সেচ সপ্তাহে একবার করা হয়। ফুল আসার পরে, পরবর্তী সার দেওয়া এবং ছাঁটাই পর্যন্ত কোনও সেচের প্রয়োজন হয় না।
আরও পড়ুন: Sunflower Farming Process: জেনে নিন তৈল উৎপাদনকারী সূর্যমুখী চাষের পদ্ধতি
পোকামাকড় ও রোগবালাই দমন (Pest and Disease control)
শিকড় পচা রোগ :
এই রোগের লক্ষণগুলি হল বাদামি বর্ণের ফুসকুড়ি পাতার নিচের পৃষ্ঠে দেখা যায় এবং কখনও কখনও কান্ড এবং ফুলেও দেখা যেতে পারে। শিকড়ের পচা রোগ থেকে নিরাময় পেতে কপার oxychloride ২.৫ গ্রাম প্রতি লিটারে মিশিয়ে মাটিতে প্রয়োগ করতে হবে।
লাল মাকড়সা :
এই পোকার আক্রমণে পাতার উপরের পৃষ্ঠের বিচিত্র বর্ণালি প্রদর্শন করে। পাতাগুলি তাদের রঙ হারাতে শুরু করে এবং অবশেষে ঝরে যায়। লাল মাকড়সার থেকে মুক্তি পেতে সালফার ৫০% WP ২ গ্রাম প্রতি লিটার জলে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।
ফুল সংগ্রহ (Harvest)
চারা লাগানোর ৬ মাসের মধ্যে ফুল তোলার জন্য প্রস্তুত হয়। ভোরবেলায় জুঁই ফুল সংগ্রহ করা উচিত। জুঁই ফুল চাষের সবচেয়ে বড় সুবিধা হল, বছর যত এগোবে ততই জুঁই ফুলের উৎপাদন বেশি হবে। অতএব বলাই যায় জুঁই ফুল চাষে কৃষকদের লাভ বৈকি ক্ষতির কিছু নেই।
আরও পড়ুন: Hasnuhana Farming Procedure at Home : বাড়ির টবে হাসনুহানা চাষ করার সহজ উপায়
Share your comments