Fish Farming – মাছ চাষে চুন কেন ব্যবহার করবেন? কি লাভ হবে এতে মাছ চাষীর

মাছ চাষে অধিক ফলনে জন্য চুন একটি অত্যাবশ্যকীয় জিনিস। চুন পুকুরের বিভিন্ন প্র্রয়োজন মেটাতে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। জলের পি-এইচ মাত্রা ঠিক রাখা ছাড়াও মাছের হাড় গঠনের কাজেও চুনের ভূমিকা অনেক। পুকুরে মাছের পরিমাণ প্রয়োজনের থেকেও যখন বেশি থাকে, তখন চুন মাছের মল-মূত্র শোধনের কাজেও ব্যয় হয়। মাছ যতই আহরণ করা হবে, চুন ততই ব্যয় হতে থাকবে।

KJ Staff
KJ Staff
Fish Production
Lime Application (Image Credit - Google)

মাছ চাষে (Fish Farming) অধিক ফলনে জন্য চুন একটি অত্যাবশ্যকীয় জিনিস। চুন পুকুরের বিভিন্ন প্র্রয়োজন মেটাতে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। জলের পি-এইচ মাত্রা ঠিক রাখা ছাড়াও মাছের হাড় গঠনের কাজেও চুনের ভূমিকা অনেক। পুকুরে মাছের পরিমাণ প্রয়োজনের থেকেও যখন বেশি থাকে, তখন চুন মাছের মল-মূত্র শোধনের কাজেও ব্যয় হয়। মাছ যতই আহরণ করা হবে, চুন ততই ব্যয় হতে থাকবে। তাই মাছকে নির্বিঘ্নে রাখার জন্য চুন ব্যবহার অত্যাবশকীয়।

পুকুর প্রস্তুতির সময় শতকে ১-২ কেজি হিসেবে এবং পরিচর্যাকালীন সময়ে ২০ দিন অন্তর অন্তর ১৫০-২০০ গ্রাম করে পোড়া চুন ভিজিয়ে ভালো করে ঘেটে দিয়ে ও আরও বেশ কিছুটা জল মিশিয়ে পাতলা করে পুকুরে ছিটিয়ে দিলে তা ভালো ফল দেয়।

চুন বনাম ডলোমাইট ও জিয়োলাইট (Calcium Carbonate Na2Al2Si2O) - 

চাষীদের প্রথমেই চুন সম্পর্কে সঠিক একটা ধারণা হওয়া খুব প্রয়োজন। পাথুরে চুন মানে হল CaCO3, যাকে চুনা পাথর অবস্থায় পাহাড়ে পাওয়া যায় এবং একে পোড়ালে CO2 উড়ে গিয়ে পড়ে থাকে CaO। এই CaO-এর সাথে জল অর্থাৎ H2O মেশালে বিক্রিয়া করে তৈরি হয় Ca(OH)2। এই Ca(OH)2 হল পুকুরে ব্যবহারযোগ্য চুন। এতে Ca2+ আছে প্রায় ৭০%। অন্যদিকে, ‘ডলোমাইট’ এর মধ্যে Ca2+ আছে প্রায় ২০% এবং ‘জিয়োলাইট’ এর  আরও কম প্রায় ৭%। তার ওপর, ডলোমাইট ও জিয়োলাইট হল অদ্রবণীয় তাই একটা সময় পরে এদের কার্যকারিতা হারিয়ে যায়। এক্ষেত্রে আরও একটি কথা উল্লেখ্য যেটা হল জিয়োলাইট RAS বা এই ফিল্টারিং এর কাজে ব্যবহৃত হওয়ার পরে সক্রিয় থাকে না। এটিকে তারপর রাসায়নিক রিএজেন্ট ব্যবহার করে আবার সক্রিয় করে তোলা হয়, যা পুকুরে ব্যবহারের গ্রহণযোগ্যতা হারায়। চুনের মধ্যে উপস্থিত Ca2+ অংশটির কাজগুলির মধ্যে অন্যতম হচ্ছে মাছের দেহে হাড় গঠন। আর OH অংশটির কাজ হচ্ছে বিভিন্ন রাসায়িনক বিক্রিয়ার অংশগ্রহণে সহায়তা করা।

চুনের কাজ (Lime Helps To) - 

পুকুরে পরিমাণ মতন চুন প্রয়োগ করলে যা যা লাভ হয়, তা হল-

১। মাটি ও জলের অম্লতা কমিয়ে ক্ষারত্ব বাড়ায়;

২। মাটি ও জলের হার্ডনেস (কার্বোনেট ও বাই-কার্বোনেট) বাড়ায়;

৩। জলের পি-এইচ নিয়ন্ত্রণ করে বাফারিং এর মাধ্যমে নিউট্রাল মান বজায় রাখে;

৪। জলের ঘোলাটে ভাব কমায় (ঋণাত্মক তড়িৎধর্মী মাটি কণাকে ধনাত্মক করে);

৫। মাছের দেহ পরিষ্কার রেখে রোগ জীবাণু থেকে দেহকে পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে;

৬। মাটি ও জলের রোগ জীবাণু ক্ষতিকর কীট পতঙ্গ ও পরজীবী ধংস করে;

৭। রোগ জীবাণু, ক্ষতিকর কীট পতঙ্গ ও পরজীবীর বংশ বিস্তার রোধ করে;

৮। চুন নিজেই একটি সার হিসেবে কাজ করে;

৯। জৈব পদার্থ ও পেরিফাইটনের সাথে যুক্ত হয়ে পুকুরের তলদেশে জল চোঁয়ানো কমিয়ে দেয়;

১০। মাটির কণাকে ভেঙে ফাটল বুজিয়ে দিয়ে পুকুরের জল ধারণ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে;

১১। মাছের হাড় ও মাংসপেশীর গঠনে সহায়তা করে;

১২। প্রয়োগ করা চুন এর প্রায় ৫০% মাছের ওজন হিসেবে ফেরত পাওয়া যায়;

১৩। এটি চিংড়ি ও প্রাণী কণার খোলস তৈরিতে কাজে লাগে;

১৪। এটি সারের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে;

১৫। পুকুরের মাটি ও জলের দূষিত পদার্থ শোধন করে;

১৬। মাছের খাদ্যের অবশিষ্টাংশকে পচতে সাহায্য করে;

১৭। এটি বিষাক্ত গ্যাস (অ্যামোনিয়া) জল থেকে বের করে দেয়;

১৮। চুন মাছের মল-মূত্র সহ সব ধরনের বর্জ্য পদার্থ শোষণ করে;

১৯। এটি মাছের দেহের উজ্জ্বলতা বাড়িয়ে মাছের বাজারদর বাড়াতে সাহায্য করে;

২০। এটি মাছের স্বাদ বাড়াতেও সহায়তা করে;

২১। চুন জলের অতিরিক্ত কার্বন-ডাই-অক্সাইডকে বেঁধে আন্তঃআণবিক ক্ষেত্র ফাঁকা করে মুক্ত বায়ুর অক্সিজেনের প্রবেশাধিকার বাড়িয়ে মাছের শ্বাসকষ্টকে কম করতে সহায়তা করে;

২২। ইউগ্লেনার স্তর ৩ বার পরিষ্কার করে (১২ তম ও ১৫ তম দিনে তাৎক্ষণিকভাবে বানানো চুনের গুড়ো ইউগ্লেনার স্তরের ওপর ছড়িয়ে এটিকে নিয়ন্ত্রণ করে);

২৩। মাছের গ্যাস কমাতে সাহায্য করে;

২৪। খালি ডিমের খোসায় টাটকা চুনের টুকরো পুকুরপারে স্থাপনে সাপ নিয়ন্ত্রণ হয়;

২৫। মাছের সাদা দাগ রোগে শুকনো পুকুরের তলায় শতকে চার কেজি হারে চুন প্রয়োগে ফল পাওয়া যায়;

২৬। উকুন হলে শতকে দুই কেজি হারে চুন প্রয়োগে ‘উসাইট’ স্তরেই উকুন ধ্বংস হয়;

২৭। মাছের প্রোটোজোয়া ঘটিত রোগে পুকুরের তলায় শতকে চার থেকে আট কেজি হারে চুন প্রয়োগে এর থেকে রেহাই পাওয়া যায়;

২৮। ক্ষত রোগে পুকুরের পরিচর্যায় শতকে আধা কেজি করে চুন প্রয়োগ করলে সুফল মেলে;

২৯। মাছের দেহে আঘাত জনিত ক্ষতে চুন প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করে;

৩০। অনাকাঙ্ক্ষিত মাছ দূরীকরণে চুন-ইউরিয়ার (শতকে এক কেজি চুন ও ২০০ গ্রাম ইউরিয়া) মিশ্রণকে গরম অবস্থায় ব্যবহার করা হয়।

আরও পড়ুন - Beetal Goat Farming: বিটল জাতের ছাগল পালনে পশুপালকের হবে দ্বিগুন আয়

মন্তব্য ও সাবধানতাঃ

পুকুর প্রস্তুতিকালে শতকে দুই কেজি করে চুন ভিজিয়ে প্রয়োগ করতে হবে। অবশ্য মাটির বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী চুনের পরিমাণ বেশিও লাগতে পারে (শতকে ৬-১২ কেজি করে)।

মাছ থাকা অবস্থায় প্রতি মাসে শতকে ২৫০ গ্রাম করে চুন গুলিয়ে ভালো করে নাড়িয়ে তারপর প্রয়োগ করতে হবে। যেই পুকুর থেকে মাছ বেশি বিক্রি করা হয়, সেই পুকুরে চুন প্রয়োগও বেশি করতে হয়।

আরও পড়ুন - Fish Farming: খাঁচায় মাছ চাষে বিপুল লক্ষীলাভ, নিবন্ধটি পুরো পড়ুন

Published On: 24 June 2021, 05:20 PM English Summary: Why use lime in fish farming? What will be the benefit of the fish farmer

Like this article?

Hey! I am KJ Staff. Did you liked this article and have suggestions to improve this article? Mail me your suggestions and feedback.

Share your comments

আমাদের নিউজলেটার অপশনটি সাবস্ক্রাইব করুন আর আপনার আগ্রহের বিষয়গুলি বেছে নিন। আমরা আপনার পছন্দ অনুসারে খবর এবং সর্বশেষ আপডেটগুলি প্রেরণ করব।

Subscribe Newsletters