পাওলোনিয়া গাছের কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট্য ও তার চাষের কৌশল (Paulownia Tree Cultivation)

(Paulownia Tree Cultivation) সারা বিশ্বে পাউলোনিয়া, প্রিন্সেস ফিনিক্স বা রয়েল এমপ্রেস বৃক্ষ হিসাবে পরিচিত। পাউলোনিয়া কাঠ একুশ শতকে কাঠ উৎপাদনকারী উদ্ভিদ হিসাবে সারা বিশ্বজুড়ে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে।এই বৃক্ষের কাঠের রং হালকা, উচ্চগুণ সম্পন্ন এবং যে কোন ধরনের পালিশ করা যায়।

KJ Staff
KJ Staff
Paulownia Tree Cultivation
Paulownia Tree (Image Credit - Google)

সারা বিশ্বে পাউলোনিয়া (Paulownia Tree), প্রিন্সেস ফিনিক্স বা রয়েল এমপ্রেস বৃক্ষ হিসাবে পরিচিত। পাউলোনিয়া কাঠ একুশ শতকে কাঠ উৎপাদনকারী উদ্ভিদ হিসাবে সারা বিশ্বজুড়ে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে।এই বৃক্ষের কাঠের রং হালকা, উচ্চগুণ সম্পন্ন এবং যে কোন ধরনের পালিশ করা যায়। এছাড়া এ বৃক্ষ পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন  করে। পাউলোনিয়া বৃক্ষ এত দ্রুত বৃদ্ধি পায় যে, চারা লাগানোর প্রথম বছরেই ১৮-২০ ফিট পর্যন্ত লম্বা হয় এবং ৬-৮ বছরে ৬০-৭০ ফুট পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। আর ৬-৮ বছরে এ বৃক্ষের কাঠের পরিপক্কতা আসে এবং এ সময়ে গড়ে প্রতিটি গাছ ১০-১২ সি.এফটি. কাঠ উৎপাদনে সক্ষম।  এর পাতা খুবই বড় (১৫-৪০ সে.মি.) আকৃতির, দেখতে অনেকটা হৃদপিন্ডের ন্যায়। এ বৃক্ষে সাদা, বেগুনী সহ নানা রং এর ফুল ফোটে। 

উৎপত্তি (Origin) - 

পাউলোনিয়ার আদি বাসস্থান চীন দেশে যা আমেরিকায় সৌন্দর্য বর্ধণকারী বৃক্ষ হিসাবে পরিচিত। নেদারল্যান্ডের রাণী আনা পৌলনা (১৭৯৫-১৮৬৫) এর সম্মানে এ বৃক্ষের নামকরণ করা হয়েছে। তাই এটি প্রিন্সেস ফিনিক্স বা রয়েল এমপ্রেস বৃক্ষ হিসাবে পরিচিত। বর্তমানে ইউরোপ, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়াতে এবং এশিয়ার বিভিন্ন দেশে এই বৃক্ষের জনপ্রিয়তা কাঠ জাতীয় বৃক্ষের সবার উপরে।

বৃক্ষের ও কাঠের বিশেষ বৈশিষ্ট্য -

১. পাউলোনিয়া বৃক্ষ অত্যন্ত দ্রুত বর্ধনশীল। একটি গাছ থেকে ৬-৮ বছরে প্রায় ৮০-১০০ বোর্ড ফিট  কাঠ পাওয়া যায়।

২. এই বৃক্ষের পাতা অনেক বড় আকৃতির জন্য ছায়াদানকারী বৃক্ষ এবং নানারকম ফুলের জন্য সৌন্দর্য বর্ধণকারী বৃক্ষ হিসাবে পরিচিত।

৩. অন্যান্য বৃক্ষের তুলনায় পাউলোনিয়া বৃক্ষের কাঠ কয়েক গুণ বেশী শক্ত, দীর্ঘস্থায়ী ও গিটমুক্ত।

৪. এই কাঠের ফাইবার খুব সোজা, মসৃণ ও হালকা তাই এই কাঠ উন্নতমানের এবং খুব চাহিদা সম্পন্ন।

৫. উচ্চতাপ সহনশীল, তাই সহজে আগুনে পুড়ে না এবং এই কাঠে সহজে পোকা ও ঘুন ধরে না।

৬. এই গাছের পাতা উচ্চ মাত্রার প্রোটিন সমৃদ্ধ পশুখাদ্য।

৭. এই গাছের ফুল থেকে উৎকৃষ্ট মানের মধু তৈরি হয়, যা ডায়াবেটিক রোগীরাও খেতে পারবে।

৮. মসৃণ আসবাবপত্র, গহনার বক্স, মিউজিক্যাল যন্ত্রপাতি, বাসের কাঠামো, দরজা, জানালা, নৌকা, স্পীড বোড, খেলাধুলার সামগ্রী, রেলগাড়ির আসবাব, কফিন সহ অন্যান্য কাজে ব্যবহার করা হয়।

৯. একবছরে ১২-১৮ ফুট, প্রথম তিনমাসে গড়ে ১ ইঞ্চি হারে বৃদ্ধি পায়।

পাউলোনিয়ার পরিবেশগত প্রভাব:

১. পাউলোনিয়ার গাছ পরিবেশ বান্ধব এর পাতা বড় হওয়ায় প্রচুর কার্বন-ডাইঅক্সাইড শোষণ করে এবং অক্সিজেন মুক্ত করে।

২. মাটির ক্ষয়রোধ করে এবং লবনাক্ততা কমায়।

৩. পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। উদাহরণ হিসাবে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্য চীনের  Yellow River জরাবৎ এবং Yangtse এ প্রায় ৩০.১৫ লক্ষ হেক্টর জমিতে পাউলোনিয়ার বনায়ন করা হয়েছে। এছাড়া অস্ট্রেলিয়া, জার্মানী, স্পেন, পর্তুগাল, আমেরিকা, পানামা, লাওস, কম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার্থে এই বৃক্ষের বনায়ন দেখা যায়।

পাউলোনিয়ার চারা তৈরি:

বীজঃ পাউলোনিয়ার বীজ ক্ষুদ্র এবং বীজ থেকে চারা উৎপাদন বেশ সময়সাপেক্ষ ও কষ্টসাধ্য এবং অঙ্কুরোদ্গমের হারও কম (৭%)।

রুট কাটিং:

পাউলোনিয়ার রুট কাটিং এর মাধ্যমে চারা তৈরি করা হয় কিন্তু রুট নির্বাচন এবং একসাথে অল্পসময়ে অনেক চারা তৈরি করার জন্য আমাদের দেশে এ পদ্ধতি উপযোগী নয়।

টিস্যু কালচারঃ

টিস্যু কালচার পদ্ধতিতে রোগমুক্ত চারা পাওয়া যায়।এ পদ্ধতিতে উৎপাদিত চারার বৃদ্ধি দ্রুত হয়। মাতৃ উদ্ভিদের গুনাগুন বজায় থাকে। এক সঙ্গে অল্প সময়ে কম খরচে অধিক চারা উৎপাদন সম্ভব।সারাবছর চারা উৎপাদন করা যায়।

চারা রোপনের সময়:

সারা বছরই পাউলোনিয়া চারা রোপন করা যায়। তবে জানুয়ারি-নভেম্বর চারা রোপনের জন্য ভালো সময়।

রোপন পদ্ধতি:

পাউলোনিয়ার টিস্যু কালচারের চারা রোপনের জন্য প্রথমে  ৯’ x ৯’ দূরত্বে ১’ x ১’ x ১’ গর্ত করে নিতে হবে। অত:পর এতে জৈব সার/ ভারমি কম্পোস্ট (কেঁচোসার) প্রয়োগ করতে হবে। তার পর প্লাস্টিকের পট কেটে মাটিসহ গাছটি লাগাতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে যাতে পট এর মাটি ও গর্তের মাটির লেবেল সমান থাকে।

অন্যান্য বৃক্ষের মত এর পরিচর্যা একই তবে খেয়াল রাখতে হবে যাতে গাছের গোড়ায় পানি না জমে, পানি জমলে যে কোন বয়সের গাছ মারা যেতে পারে। বৃদ্ধি পর্যায়ে এ গাছের পার্শ্ব শাখা কেটে দিতে হবে। গাছের উচ্চতা ৩০-৩৫ ফিটের পর পার্শ্ব শাখা ছাটা বন্ধ করতে হবে।

পরিচর্যা ও রোগবালাই:

চারা অবস্থায় গাছের গোড়ায় পানি জমতে পারবে না।

যেকোন ধরণের আগাছা কিংবা ঘাস গাছের গোড়ায় জমতে দেওয়া যাবেনা।

শীতকালীন সময় জুড়ে গাছের গোড়ায় প্রয়োজনমতো পানি সরবরাহ করতে হবে।

পাউলোনিয়া চারা গাছের পাতাকে লিফ স্পট ও লিফ ব্লাইট নামক ছত্রাক এবং শেকড়কে মাটিস্থ ছত্রাক থেকে মুক্ত রাখতে ছত্রাকনাশক ব্যবহার করতে হবে।

গ্রীষ্মকালে চারাগাছগুলো শোষণকারী কীটপতঙ্গ এবং বর্ষায় মথ দ্বারা আক্রান্ত হয়।

সাধারণত তিনবছর পর্যন্ত পরিচর্যা স্থায়ী রাখতে হয়।

সার প্রয়োগ:

গাছের বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় পরিমাণ জৈব সার প্রয়োগ করতে হবে। তাছাড়া গাছের দ্রুত বৃদ্ধির জন্য নাইট্রোজেন, ফসফরাস ও পটাসিয়াম সার ২০০ গ্রাম: ১০০গ্রাম: ১০০গ্রাম অনুপাতে প্রয়োগ করতে হবে।

ফলন:

১০টি পাউলোনিয়া চারা রোপন করে দুই বছরেই স্বাবলম্বী হওয়া সম্ভব।এক বিঘাতে ১৫০ টি চারা লাগানো যেতে পারে।

৬-৮ বছরের মধ্যে গাছ কাটার উপযুক্ত হয়। 

আরও পড়ুন - সঠিক পরিচর্যার মাধ্যমে কলম পদ্ধতিতে গোলাপ চাষ (Cultivation Of Roses)

Published On: 15 February 2021, 03:33 PM English Summary: Cultivation techniques of Paulownia tree

Like this article?

Hey! I am KJ Staff. Did you liked this article and have suggestions to improve this article? Mail me your suggestions and feedback.

Share your comments

আমাদের নিউজলেটার অপশনটি সাবস্ক্রাইব করুন আর আপনার আগ্রহের বিষয়গুলি বেছে নিন। আমরা আপনার পছন্দ অনুসারে খবর এবং সর্বশেষ আপডেটগুলি প্রেরণ করব।

Subscribe Newsletters