মিষ্টি কুমড়া বর্ষজীবী লতানো উদ্ভিদ যা ভিটামিন এ সমৃদ্ধ উৎকৃষ্ট সব্জি। মিষ্টি কুমড়ো খুবই জনপ্রিয় একটি সব্জি | কচি মিষ্টি কুমড়া সব্জি হিসেবে এবং পাকা ফল দীর্ঘদিন রেখে সবজি হিসেবে ব্যবহার করা যায়। মিষ্টি কুমড়ার পাতা ও কচি ডগা শাক হিসেবে বেশ সুস্বাদু। পরিপক্ক ফল শুষ্ক ঘরে সাধারণ তাপমাত্রায় প্রায় ৪-৬ মাস সংরক্ষণ করা যায়। মিষ্টি কুমড়া ডায়াবেটিস রোগ নিয়ন্ত্রণে কাজ করে। শিখে নিন এই সব্জির সহজ চাষ (Sweet Pumpkin Cultivation) পদ্ধতি,
মাটি (Soil):
সুনিষ্কাশিত জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ দোঁআশ বা এঁটেল দোঁআশ মাটি মিষ্টি কুমড়া চাষাবাদের জন্য উওম। মিষ্টি কুমড়ার জন্য মাটির সর্বোত্তম অমস্নতা ৫.৫-৬.৮।
চাষের মৌসুম (Farming time):
এই আবহাওয়ায় বছরের যেকোনো সময় মিষ্টি কুমড়ার বীজ বোনা যায়। শীতকালীন ফসলের জন্য অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর এবং গ্রীষ্মকালীন ফসলের জন্য ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত বীজ বোনার উপযুক্ত সময়। তবে বীজ উৎপাদনের জন্য নভেম্বরের মধ্যভাগে বীজ বপন করা উত্তম।
বীজের হার (Seed Rate):
মিষ্টি কুমড়া চাষের জন্য বিঘা প্রতি ৬৫০-৮০০ গ্রাম এবং হেক্টরপ্রতি ৫-৬ কেজি পরিমাণ বীজের প্রয়োজন হয়।
আরও পড়ুন - Beetal Goat Farming: বিটল জাতের ছাগল পালনে পশুপালকের হবে দ্বিগুন আয়
চারা উৎপাদন পদ্ধতি:
নার্সারিতে পলিবেগে চারা তৈরি করে রোপণ করা উত্তম। পলিব্যাগে চারা উৎপাদনের ক্ষেত্রে (৩ ইঞ্চি/৪ ইঞ্চি) অথবা (৮ সে.মি/১০ সে. মি.) আকারের পলিব্যাগ ব্যবহার করা হয়। অতিরিক্ত জল নিষ্কাশনের জন্য ছিদ্রযুক্ত পলিব্যাগ ব্যবহার করতে হবে। বীজ বপনের আগে ১৫-২০ ঘণ্টা জলে ভিজিয়ে রাখলে বীজের অষ্কুরোদগম সহজ ও দ্রুত হবে। প্রতি ব্যাগে ২টি বীজ বুনতে হবে। বীজের আকারের দিগুণ মাটির গভীরে বীজ পুতে দিতে হবে।
চারা রোপন (Plantation):
বীজ গজানোর পর ১৫-১৬ দিন বয়সের চারা মাঠে লাগানোর জন্য উত্তম।পলিব্যাগের ভাঁজ বরাবর বেস্নড দিয়ে কেটে পলিব্যাগ সরিয়ে মাটির দলাসহ চারটি নির্দিষ্ট জায়গায় লাগিয়ে চারপাশে মাটি দিয়ে ভরাট করে দিতে হবে। চারা লাগানোর পর গর্তে জল দিতে হবে।
মাদা তৈরী:
মাদার আকার হবে ( ৪৫ x৪৫ x ৪৫ )সে.মি. | মাদা থেকে মাদার দূরত্ব হবে ২.৫ মিটার (রবি) এবং ৩.০ মিটার (খরিফ) মৌসুমে। প্রতি মাদায় বীজের সংখ্যা হবে ৪-৫ টি |
ফুলধারণ পদ্ধতি:
ফুল ধারণ পদ্ধতিতে কৃত্রিম পরাগায়ন খুবই জরুরি | কৃত্রিম পরাগায়ণের মাধ্যমে মিষ্টিকুমড়া ফলন শতকরা ২৫-৩০ ভাগ বাড়ানো যায়। এর ফুল খুব সকালে ফোটে। এ ক্ষেত্রে কৃত্রিম পরাগায়ণ সকাল ৯ টার মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে।
রোগবালাই ও দমন (Disease management system):
মিষ্টি কুমড়ার মাছি পোকা:
স্ত্রী মাছি পোকা মিষ্টি কুমড়ার কচিফল ও ফুলের মধ্যে প্রথমে ডিম পাড়ে। পরবর্তীতে ডিম থেকে কীড়া বের হয়ে ফল ও ফুলের ভিতর কুরে কুরে খায় ফলে ফল ও ফুল পচন ধরে নষ্ট হয়ে যায়। এই পোকার আক্রমণের ফলে প্রায় ৫০- ৭০ ভাগ ফল নষ্ট হয়ে যায়।
প্রতিকার:
আক্রান্ত ফল সংগ্রহ করে তা নষ্ট করে ফেলতে হবে।পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন চাষাবাদ করতে হবে।
সেক্স ফেরোমন ফাঁদ ও বিষটেপের ব্যবহার মাছিপোকার আক্রমণ থেকে ফসল রক্ষা করার জন্য অত্যন্ত কার্যকর। আক্রমণ বেশি হলে এসিমিক্স ১০ মিলি ( ১০ লি জলে ৫ শতাংশ জমির জন্য ), সবিক্রণ ২ মিলি/লিটার, সাইপারমেথ্রিন ১ মিলি/ লিটার জলে দিয়ে স্প্রে করতে হবে।
রেড পামকিন বিটল:
পুর্ণ বয়স্ক বিটল পাতা ও ফুল খায়। চারা গাছ অবস্থায় সর্বাধিক ক্ষতি করে থাকে। গ্রাব ( বাচ্চা ) মাটির নিচে কান্ড ও শিকড় আক্রমণ করে।
প্রতিকার:
চারা আক্রান্ত হলে হাত দিয়ে পূর্ণবয়স্ক পোকা ধরে মেরে ফেলতে হবে। হাত জাল দিয়ে পোকা ধরা ও মেরে ফেলা। পাতার উপর ছাই ছিটিয়ে সাময়িকভাবে দমন করা। চারা বের হওয়ার পর থেকে ২০-২৫ দিন পর্যন্ত মশারির জাল দিয়ে চারা গুলো ঢেকে দেওয়া। আক্রমণ বেশি হলে প্রতি লিটার জলে সাইপারমেথ্রিন ১ মিলি, মিপ্সিন, সপসিন ২ গ্রাম, একতারা ১ গ্রাম, সেভিন ২ গ্রাম মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।
ফসল সংগ্রহ:
জাত ও আবহাওয়ার ওপর নির্ভর করে মিষ্টি কুমড়া পরিপক্ক বীজ বোনার পর থেকে ৭৫-৮০ দিন সময় লাগে। যত্ন সহকারে চাষ করলে ভালো জাতের মিষ্টি কুমড়া থেকে প্রতি একরে ১৮- ২০ টন ফলন পাওয়া যায়।
নিবন্ধ: রায়না ঘোষ
আরও পড়ুন - Fish Farming: খাঁচায় মাছ চাষে বিপুল লক্ষীলাভ, নিবন্ধটি পুরো পড়ুন
Share your comments