কোভিড সংক্রমণে সারা দেশে যখন নাজেহাল অবস্থা, তখন গ্রামীণ অর্থনীতির ক্ষেত্রে তা শাপে বর হতে চলেছে। সময়মতো বর্ষার আগমন এবং কোভিড সংক্রমণ দুইয়ের জেরে চাঙ্গা হতে চলেছে দেশের গ্রামীণ অর্থনীতি। বাড়ছে কর্মসংস্থান। হচ্ছে রোজগার।
দেশের বিভিন্ন প্রান্তে কাজ করা পরিযায়ী শ্রমিকরা নিজেদের গ্রামে ফিরে আসায় জোয়ার এসেছে চাষবাসে। মনিটরিং ইন্ডিয়ান ইকোনমিসের (সিএমআইই) প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, গ্রামে বেকারত্বের হার কমছে। শেষ সপ্তাহে বেকারত্বের হার কমে হয়েছে ৭.২৬ শতাংশ । যা আগের সপ্তাহে ছিল ১০.৯৬ শতাংশ। পরিসংখ্যান বলছে, বেকারত্বের হার শেষ তিন মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন স্তরে নেমে গেছে।
কিন্তু এমন ঘটনা ঘটার কারণ কী?
শহরগুলি থেকে পরিযায়ী শ্রমিকদের নিজ নিজ গ্রামাঞ্চলে ব্যাপক বেকারত্বের আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল। তবে, ঘটেছে উল্টোটাই। যেহেতু শ্রমিকদের ফেরতের সময়টি এবং গ্রীষ্মকালীন শস্য রোপণের মরসুম এক ছিল, তাই কাজ হারানোর পরিবর্তে কাজ পাওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই বেড়েছে। গ্রামীণ কর্মসংস্থান সমক্রান্ত বিভিন্ন কর্মসূচিতে সরকারের বরাদ্দ বাড়ায় তা ঘটনার অনুকূল হয়েছে।
এদিকে, সিএমইআই-এর বক্তব্য “বপনের সময় গ্রামীণ কর্মসংস্থানের পরিমাণ অনেকটাই বাড়ে। গ্রামীণ অঞ্চলে চাষের জন্য এখন লোক পাওয়া যায় না। কিন্তু শ্রমিকদের ফিরে আসায় মাঠে কাজের লোকের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া, কেন্দ্র ও রাজ্যগুলির এমপ্লয়মেন্ট গ্যারান্টি স্কিম এবং পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য বিভিন্ন কাজের প্রকল্প নতুন কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা বাড়িয়েছে।
অন্যদিকে, শহরে কর্মসংস্থানের হার ক্রমশ কমছে। এর একটি কারণ হ'ল দিল্লি, চেন্নাই এবং মুম্বাইয়ের ক্রমবর্ধমান বেড়ে চলা সংক্রমণের প্রভাব। খরচ বাঁচাতে সংস্থাগুলি কর্মী ছাটাই করছে। তাই বেকারত্বের হার ১১ শতাংশের আশেপাশে রয়েছে। শেষ সপ্তাহে তা কমেছে ২ শতাংশ।
কোভিডের আগে দেশের সামগ্রিক বেকারত্বে হার ছিল ৮.৪১ শতাংশ। কিন্তু বর্তমানে তা হয়েছে ৮.৪৮ শতাংশ।
অর্থনীতিবিদরা বলেছেন, গ্রামীণ অর্থনীতির নতুন দিক খুলে যাওয়ায়, যথেষ্ট বৃষ্টিপাত এবং বপনের মরসুমে জোয়ার আসায় যে কর্মসংস্থান গ্রামাঞ্চলে তৈরি হয়েছে তা অনেকটাই মারের হাত থেকে বাঁচিয়েছে।
আবার, সিএমআইইয়ের প্রধান কার্যনির্বাহী সম্পাদক মহেশ ব্যাস বলেছেন, “লক-ডাউন শিথিল করা ছাড়াও আমরা ভাল বৃষ্টিপাত দেখতে পাচ্ছি এবং বপনের মরসুম খুব ভাল হয়েছে। তাই মোট ফলনের পরিমাণ ৩০% পর্যন্ত বাড়ার সম্ভাবনা সম্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।”
তিনি আরও জানান, “নারেগা ও গরিব কল্যাণ রোজগার অভিযানের অতিরিক্ত অর্থ বরাদ্দ হওয়ায়, সেটি গ্রামীণ অঞ্চলে কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সহায়তা করছে।
তবে শহরাঞ্চলে ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, চাকরির ক্ষেত্র পুনর্জীবিত হতে আরও অনেক বেশি সময় লাগতে পারে। “লক-ডাউন আস্তে আস্তে শহরাঞ্চল থেকে তুলে দেওয়া হলে আবার মানুষ কাজে ফিরতে পারবে। কিন্তু যেভাবে কোভিড সংক্রমণের মামলা বেড়ে চলেছে তাতে ভয়ের কারণ রয়েছে। সংগঠিত ক্ষেত্রে কাজের প্রবাহ স্বাভাবিক হতে অনেকটাই সময় লেগে যাবে।
অপরদিকে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বিপুল কর্মসংস্থান তথা গ্রামীণ মানুষকে নিয়ে কর্মসূচি রূপায়ণের জন্য গরিব কল্যাণ রোজগার অভিযানের সূচনা করেন। এই অভিযানের উদ্দেশ্য হ’ল – কোভিডের জন্য ক্ষতিগ্রস্ত প্রবাসী শ্রমিকদের কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দেওয়ার পাশাপাশি, জীবন-জীবিকার মানোন্নয়ন ঘটানো। বিহারে খাগাড়িয়া জেলার তেলিহার গ্রাম থেকে এই অভিযানের সূচনা হয়। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আয়োজিত এই অভিযানের সূচনা অনুষ্ঠানে কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন ও পঞ্চায়েতি রাজ মন্ত্রী নরেন্দ্র সিং তোমর। তার সাথে ৬টি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ও প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
এই উপলক্ষে পঞ্চায়েত মন্ত্রী তোমর বলেন, কোভিড মহামারীর জন্য ভারত সহ সমগ্র বিশ্ব কঠিন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। লক-ডাউন ঘোষণার সময় থেকে গ্রামবাসী, দরিদ্র মানুষ, কৃষক ও কর্মীরা যে সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন, তার প্রেক্ষিতেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। এই লক্ষ্যে মানুষের সমস্যা কিছুটা লাঘব করতে ১ লক্ষ ৭০ হাজার কোটি টাকার প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্ব ও তার কৌশলগত পরিকল্পনার জন্য ভারত করোনা মহামারীর সময় উদ্ভূত চ্যালেঞ্জগুলিকে সুযোগে পরিণত করতে পেরেছে।”
দেশের ৬টি রাজ্যের ১১৬টি জেলায় এই অভিযান গ্রহণ করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় পঞ্চায়েতমন্ত্রী বলেন, ২৫টি ভিন্ন ভিন্ন ক্ষেত্রে শ্রমিকরা ১২৫ দিনের কাজ পাবেন। এর ফলে, কর্মসংস্থানের বড় সুযোগ বৃদ্ধি পাবে। এই অভিযানের আওতায় ১২৫ দিনের কর্মসংস্থান হবে এবং বিভিন্ন কর্মকান্ড মিশন মোড-ভিত্তিতে রূপায়িত হবে। ১২টি কেন্দ্রীয় মন্ত্রক মধ্যে একটি নির্দিষ্ট উপায়ে এই অভিযানের কাজ বাস্তবায়িত করা হবে। এই মন্ত্রকগুলি হ’ল – গ্রামোন্নয়ন, পঞ্চায়েতি রাজ, সড়ক পরিবহণ ও মহাসড়ক, খনি, পানীয় জল ও স্যানিটেশন, পরিবেশ, রেল, পেট্রোলিয়াম ও প্রাকৃতিক গ্যাস, নতুন ও পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি, সীমান্ত সড়ক, টেলিযোগাযোগ এবং কৃষি। এই অভিযানের উদ্দেশ্যই হ’ল গ্রামে ফিরে আসা পরিযায়ী শ্রমিক ও ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামীণ মানুষের জন্য জীবন-জীবিকার সুবিধা প্রদান করা। যে সমস্ত গ্রামে পরিকাঠামোর অভাব রয়েছে, সেখানে সড়ক, আবাসন, অঙ্গনওয়াড়ি, পঞ্চায়েত ভবন, কমিউনিটি কমপ্লেক্স নির্মাণের মতো কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে।
কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রক নোডাল মন্ত্রক হিসাবে এই কর্মসূচি রূপায়ণ করবে। রূপায়ণের কাজে রাজ্য সরকারগুলির সঙ্গে সমন্বয় বজায় রাখা হবে। অভিযানের আওতায় চিহ্নিত জেলাগুলিতে বিভিন্ন কর্মসূচি যথাযথভাবে ও সময় মতো রূপায়ণের কাজ দেখাশোনার জন্য যুগ্মসচিব বা তাঁর উচ্চ পদাধিকারী আধিকারিকদের কেন্দ্রের পক্ষ থেকে নোডাল আধিকারিক হিসাবে নিয়োগ করা হবে।
সুব্রত সরকার
#FtbKrishiJagran: প্রতি কৃষক একটি ব্র্যান্ড (FTB) হয়ে উঠুক এবং তার পণ্য বিশ্বের কাছে প্রদর্শন করুক
Share your comments