দেশের অধিকাংশ রাজ্যেই দক্ষিণ-পশ্চিম বর্ষার অনুপ্রবেশ ঘটেছে এবং কৃষকরা তাদের ফসলের সর্বোত্তম উৎপাদনের জন্য অপরূপা প্রকৃতির দান বৃষ্টির আশায় রয়েছেন। ভারতে কৃষিক্ষেত্রে ফসলে সেচের জন্য কৃষকরা মূলত বর্ষার উপর নির্ভর করে। যদি বর্ষার আগমন সময় মত না হয়, বা বৃষ্টিপাত অনিয়মিত হয়ে পড়ে, তবে তা দেশের কৃষিতে মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে। তবে ভারতে আবহাওয়া পর্যবেক্ষণের প্রধান সংস্থা IMD (ভারত আবহাওয়া বিভাগ) জানিয়েছে যে, এ বছর ২০২০ বর্ষা স্বাভাবিক সময়েই রাজ্যে প্রবেশ করেছে এবং এখনও পর্যন্ত আশা করা যায় বৃষ্টিপাতের পরিমাণও পর্যাপ্ত হতে চলেছে। কিন্তু যে সকল জায়গায় পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত হবে না, বা যে সকল অঞ্চল অপেক্ষাকৃত খরা প্রবণ, সেই সকল শুষ্ক অঞ্চলে কৃষকরা কীভাবে চাষ করবেন? যে পরিমাণই বৃষ্টিপাত হোক, তা কাজে লাগিয়ে কীভাবে সঠিক গুনমানের ফসল কৃষকরা উৎপাদন করবেন, তা নিয়েই কৃষকদের জন্য রইল কিছু সতর্কতা।
#বর্ষা ২০২০, খারিফ শস্য চাষ (Kharif season)-
কৃষকরা অপর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত মোকাবেলায় যে সকল প্রয়োজনীয় সতর্কতা অবলম্বন করতে পারে, সে সম্পর্কে অবগত রাখতে পাঁচটি পরামর্শ রয়েছে কৃষকদের জন্য। অন্য মরসুমেও এই পদক্ষেপগুলি অনুসরণ করা যেতে পারে।
শস্য নির্বাচন -
শুষ্ক জমি এবং শুষ্ক অঞ্চলের জন্য, ফসল কাটার সময়কালের কথা মাথায় রাখা জরুরি। উদাহরণস্বরূপ, যে ফসলগুলি অল্প সময়ের মধ্যে সংগ্রহ করা যায় এবং খরা প্রতিরোধী হয়, খারিফ মরসুমে সেই সকল ফসল চাষের জন্য নির্বাচন করা উচিত। অনিয়মিত বর্ষা কিছু শস্যের ফলনকে প্রভাবিত করে না, বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে কৃষকদের সেই সকল ফসল চাষ করা উচিত। উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে, কৃষকরা এই মরসুমে বাজরা, জোয়ার এবং ডাল চাষ করলে তারা লাভবান হবেন।
সমন্বিত কৃষিক্ষেত্র (Integrated Farming)-
কৃষিতে একীভূত পদ্ধতির বিষয়টি নিশ্চিত করতে কৃষকদের একীভূত কৃষিক্ষেত্র গ্রহণ করতে হবে। সংহত কৃষিকাজের ব্যবস্থা হ'ল, উদ্যান ও পশুপালনের মতো অন্যান্য কৃষিকাজের একীকরণকে বোঝায় যাতে সম্পদের আদান-প্রদান হয়। উদাহরণস্বরূপ, একদিকে গবাদি পশু পালন করা এবং আপনার খামার থেকেই পশুটিকে চারা খাওয়ানো, অপরদিকে রাসায়নিক সার ক্ষেতে প্রয়োগের পরিবর্তে গবাদি পশুর বর্জ্য সার ব্যবহার, আপনাকে দ্বৈত সুবিধা দিতে পারে। ক্ষেতের ফসলে জৈব সার ব্যবহারের ফলে মাটির উর্বরতা কেবল উন্নত হয় না, এর সাথে সাথে জল ধারণ ক্ষমতাও উন্নত হয় এবং ফসলের গুনমানও বৃদ্ধি পায়।
জলাশয় এবং বৃষ্টির জলের ব্যবস্থাপনা -
জল আহরণ এবং বৃষ্টির জলের ব্যবস্থাপনা কৃষিক্ষেত্রে একটি প্রয়োজনীয় দিক। সারা বিশ্ব জুড়ে বিরাজমান জলের অভাবের বিপরীতে বৃষ্টির জল দক্ষতার সাথে ব্যবস্থাপনা/সংরক্ষণ কৃষকদের খরা প্রবণ অঞ্চলে ফসল উৎপাদনে সহায়তা করতে পারে। এই প্রক্রিয়া কঠিন মনে হলেও তা অসম্ভব নয়। যে অঞ্চলে খামার নেই সে সকল অঞ্চলে জল ব্যবস্থাপনার প্রকল্পগুলি বাস্তবায়ন করা যেতে পারে, যাতে বৃষ্টিপাতের জল সংরক্ষণ করে প্রয়োজন মত কৃষি বিভাগ ব্যবহার করতে পারে।
বিকল্প জমি ব্যবহার -
একাধিক ফসল, ট্রিপল ক্রপিং, কোয়াড্রাপল ক্রপিং, পরিবর্তিত ফসল চাষ, চারণভূমি পরিচালন প্রভৃতি শস্য ব্যবস্থা সম্পর্কে কৃষকদের বিবেচনা করতে হবে, যাতে মাটির জল ধারণ ক্ষমতা বজায় থাকে। কৃষকদের মনোক্রপিং সিস্টেম এড়িয়ে চলাই ভালো, কারণ এই পদ্ধতিতে মাটি তার প্রাকৃতিক আর্দ্রতা হারাতে পারে। অতএব মনোক্রপিং সিস্টেম ব্যতিরেকে অন্যান্য ক্রপিং সিস্টেম কৃষকদের অবলম্বন করতে হবে।
মাটি ব্যবস্থাপনা -
বর্ষা শুরু হওয়ার আগে, মাটির জল ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য কৃষক মাটি প্রস্তুত করতে পারেন। উদাহরণস্বরূপ, মধ্য-মরসুমে মাটি পরীক্ষা এবং সংশোধন, মালচিং এবং অ্যান্টি ট্র্যান্সপারেন্ট ফোলিয়ার স্প্রে – ইত্যাদি মাটির জলাবদ্ধতার ক্ষমতা বাড়িয়ে তুলতে সহায়তা করতে পারে। সুতরাং, এই বর্ষায় অপর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত হলেও তা কৃষকদের ফসলের পক্ষে খুব বড় ক্ষতির কারণ হবে না।
Related Link - ইলিশে (Hilsa in Monsoon) আশায় বুক বাঁধছেন রাজ্যের মৎস্যজীবীরা, বর্ষায় খুলছে উপার্জনের পথ
বর্ষা ২০২০: বর্ষা (Monsoon) কৃষিকাজের জন্য আশীর্বাদ স্বরূপ, তবে এই ফসলগুলির জন্য তা ক্ষতিকারক
Share your comments