দেশব্যাপী লকডাউন চলাকালীন বিভিন্ন ব্যবসার মতো ভারতের পোল্ট্রির ব্যবসাও মার খাচ্ছে। তবে চাহিদা তলানিতে ঠেকলেও ব্যবসা এখন কিছুটা ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। কিন্তু রেস্তোঁরা, ক্যাটারিং সেক্টর ও বিভিন্ন অনুষ্ঠান কর্ম বন্ধ থাকায় এখনও ব্যবসার গতি বাড়েনি।
পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনগুলির মতে, জুনে পণ্যের চাহিদা বেড়েছে ১৫-২০ শতাংশ। তবে লকডাউন চলাকালীন এই খাতে লোকসানের পরিমাণ প্রায় ৩০,০০০ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। সরবরাহে ঘাটতির কারণে দামও বেড়েছে অনেকটাই। অন্যদিকে, এই সংকটটি ভুট্টা চাষীদের দুর্দশাও বাড়িয়ে তুলছে। তাদের অভিযোগ, চাহিদা কম আবার পাল্লা দিয়ে দামও কমেছে। ভুট্টা পোল্ট্রি খাতের মুরগির খাদ্যশস্য যোগানের একটি বড় অংশ হিসেবে কাজ করে। ভারতের পোল্ট্রি ফেডারেশনের সভাপতি রমেশ খেত্রী বলেছেন, "হাঁস-মুরগির খাতে এখন ১৫-২০ শতাংশ চাহিদা আবার তৈরি হলেও পোল্ট্রি পণ্য বিক্রি বন্ধ হওয়ায় গত কয়েক মাসের ক্ষয়ক্ষতি তা পূরণ করতে পারবে না। লকডাউনের সময় পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গিয়েছিল পোল্ট্রি ব্যবসা। এই ব্যবসায় দেশজুড়ে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৩০,০০০ কোটি টাকা। "
তিনি আরও জানিয়েছেন যে, বর্তমানে “ভারতের প্রায় সব রাজ্যেই মুরগির চাহিদা বেড়েছে, তবে হাঁস-মুরগির শিল্পের পরিস্থিতি এখনও স্বাভাবিক হয়নি। এই মুহুর্তে, উৎপাদন ২০ শতাংশ এবং চাহিদা ২৫ শতাংশ। তাই দাম বেড়েছে। হোটেল এবং রেস্তোঁরাগুলি চালু হলে, চাহিদা আরও বাড়বে। পোল্ট্রি শিল্পের অবস্থা জুন পর্যন্ত একই থাকবে। তবে জুলাইয়ের পরে চাহিদা এবং যোগানে সামঞ্জস্য তৈরি হতে পারে। দামও হতে পারে স্বাভাবিক। তবে, একটি বিষয় এখন স্পষ্ট করোনাভাইরাস এবং মুরগির মধ্যে কোনও সম্পর্ক রয়েছে বলে মানুষের মনে আরও কোনও ভ্রান্তি নেই। ”
এদিকে, ২৫ শে মার্চ কার্যকর হওয়া কোভিড -১৯ লকডাউন চলাকালীন মুরগির দাম অনেক জায়গাতেই নেমে গিয়ে তা দাঁড়ায় ১০-১৫ টাকা/কেজি। যেখানে উৎপাদন মূল্য ছিল প্রায় ৭৫ টাকা/কেজি। একইভাবে, ডিমের দাম উৎপাদন মূল্য ছিল ৩ টাকা। যেখানে বিক্রি করে ১.৫০ টাকা দাম পাওয়াও যথেষ্ট মুশকিল হয়ে পড়েছিল। ঘাটতির পরিমাণ এমন পর্যায় পৌঁছেছিল যে,
অনেক ব্যবসায়ী বা পোল্ট্রি কৃষক পাখিদের জঙ্গলে ছেড়ে দিয়েছিলেন, অনেকে আবার খামারেই জবাই করে দিয়েছিলেন, কারণ ব্যবসার এই ধরনের ওঠানামার জন্য স্টক ধরে রাখা কার্যত অসম্ভব হয়ে পড়েছিল। এর ফলস্বরূপ, সরবরাহের ঘাটতির ফলে পোল্ট্রি পণ্যের দাম বাড়ছে। পোল্ট্রি সমিতির এক কর্মকর্তার কথায়, “বর্তমানে ডিমের সরবরাহ হচ্ছে বটে কিন্তু তা কোল্ড স্টোর থেকে আসছে এবং মুরগি পালন কেবল বড় কৃষকই বা ব্যবসায়ীরাই করছে। যাতে ইতিমধ্যেই ঘাটতি দেখা দিয়েছে এবং তার জন্য দামও বেড়েছে। অনেক ক্ষুদ্র ও মাঝারি মাপের ব্যবসায়ী বা পোল্ট্রি কৃষক লোকসানের কারণে তাদের ব্যবসা বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছেন। এমনকি, কৃষকরা এখও যদি নতুন মুরগি দিয়ে খামার স্থাপন করে তাহলে সরবরাহ স্বাভাবিক হতে হতে চার-পাঁচ মাসে সময় লেগে যাবে। তাছাড়া, সামনেই শ্রাবণ মাস এবং নবরাত্রি। আমিষ খাবারের চাহিদা স্বাভাবিক কারণেই কম থাকবে। তাই পোল্ট্রি ব্যবসা লাভের মুখ দেখতে আবার বছর ঘুরে যেতে পারে। তবে, সেটাতেও কোনও নিশ্চয়তা নেই।
দুই মাসের লকডাউনের পরে দেশটি আনলকিং-এর পরে, পোল্ট্রি পণ্যগুলির অভ্যন্তরীণ খরচের চাহিদা পুনরুদ্ধারিত হয়েছে। তবে পোল্ট্রি পণ্যগুলির একটি বড় অংশ হোরকা খাতের বাজার চাহিদা দ্বারা গ্রাস করা হয় এবং বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখান থেকে চাহিদা শীঘ্রই পুনরুদ্ধারের সম্ভাবনা নেই।
পশুপালন, মৎস্য, দুগ্ধ মন্ত্রকের প্রাক্তন সচিব তরুন শ্রীধর জানান, “পোল্ট্রি ব্যবসা পুরোপুরি আবার স্বমহিমায় ফিরে আসতে এক বছরেরও বেশি সময় লাগবে। কারণ লকডাউনের সময়সীমা বারবার বেড়ে চলেছে। তার জন্য পোল্ট্রি ব্যবসার প্রভূত ক্ষতি হয়েছে। তবে এই খাত বৃদ্ধিতে ২০২০ সালে কোনও আশার আলো নেই।”
মন্ত্রকের বক্তব্য অনুসারে, দেশের ৯০ শতাংশেরও বেশি পোল্ট্রি মার্কেট ওয়েট মার্কেট (wet market) হিসাবে পরিচিত। সেখানে যেতে এখনও অনেকেই স্বচ্ছন্দ্যবোধ করেন না। তাছাড়া, হোটেল, রেস্তোরাঁ বন্ধ হয়ে আছে। ফলে ব্যবসা মার খাচ্ছে। পরিস্থিতি যেদিকে যাচ্ছে তাতে সামনের এক বছরেরও পুনরজ্জীবিত হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
সুব্রত সরকার
Related link - লেবু চাষ (Lemon cultivation) করে কৃষক উপার্জন করতে পারেন ২ কোটি পর্যন্ত
বর্ষায় স্বল্প ব্যয়েই চাষ করুন অড়হর (Pigeon Pea Farming), হবে প্রচুর মুনাফা
বর্ষায় ছাগলের যত্ন (Safety of Goat) নিন, রোগের হাত থেকে বাঁচাতে কী করবেন দেখুন
Share your comments