এমনিতেই বলা হয় আমাদের দেশে ১২ মাসে ১৩ পার্বণ। বিভিন্ন ঐতিহ্যময় উৎসবগুলির মধ্যে অন্যতম হল মকর সংক্রান্তি। দেশের প্রতিটি কোনায় এই উৎসবকে ঘিরে মেতে ওঠে দেশবাসী। অনেকের মনে প্রশ্ন আসতেই পারে কেন পালিত হয় এই উৎসব। কি ইতিহাস রয়েছে এই উৎসব পালনের পেছনে।
লোককথা অনুযায়ী মকর সংক্রান্তির দিন মহাভারতে পিতামহ ভীষ্ম ইচ্ছামৃত্যু গ্রহণ করেছিলেন। আরও একটি কথা শোনা যায় এই দিন দেবতাদের সঙ্গে অসুরদের যুদ্ধের সমাপ্তি হয়। এদিন দেবতাগণ অসুরদের মুণ্ডু কেটে মন্দিরা পর্বতে পুঁতে দিয়েছিলেন। আক্ষরিক অর্থে এদিন সূর্য নিজ কক্ষপথ থেকে মকর রাশিতে প্রবেশ করে। তাই এই দিনকে মকর সংক্রান্তি বলা হয়। পাশাপাশি এই দিন থেকে শুভ দিনের সূচনা হয়। কৃষকরা নতুন ফসল তোলা শুরু করে এই দিন থেকে। আসুন দেখে নেওয়া যাক আমাদের দেশের প্রতিটি কোনায় ঠিক কীভাবে পালিত হয় মকর সংক্রান্তি।
আরও পড়ুনঃ বেলুড় মঠে নিভৃতে পালিত হল স্বামী বিবেকানন্দের ১৬০তম জন্মদিন
পশ্চিমবঙ্গ-পৌষ পার্বণ
বাংলা মানেই সংস্কৃতি সমৃদ্ধ একটি রাজ্য। বিভিন্ন উৎসবে এই রাজ্যে বিভিন্ন আচার নিয়ম মেনে পালিত হয়। বলা হয় নতুন ফসল কাটার দিন শুরু এই সংক্রান্তির দিন থেকে এবং শীতকালের গমন। বাঙালির প্রতিটি ঘরে নিয়ম রয়েছে সংক্রান্তির দিন দূরে কোথাও যাওয়া যাবে না আবার গেলেও রাতের মধ্যে ফিরে আসতে হবে। পাশাপাশি সংক্রান্তির আগের দিন বাড়িঘর সব পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করা এবং সংক্রান্তির নতুন জামা পরে নতুন দিনের সূচনা করে পালন করা হয় এই দিন। এছাড়াও বিভিন্ন মেলা হয় বাংলার বিভিন্ন জেলায়। তাছাড়াও অন্যতম সেরা লোকমাধ্যম টুসু ভাদু গানের বসে আসর। সবমিলিয়ে এই সংক্রান্তির সঙ্গে জড়িয়ে থাকে বাংলার ঐতিহ্যময় সংস্কৃতি। বাংলায় পৌষ পার্বণ নামে পালিত হয় এই মেলা। খাবারের পাতে থাকে বিভিন্ন পিঠে পুলির সমারোহ। আর সঙ্গে থাকে আকাশে ঘুড়ির মেলা।
অসম - মাঘ বিহু/ ভোগালী বিহু
অসমে কৃষকদের অন্যতম সেরা উৎসব পালিত হয় এই দিন। ফসল কাটা দিয়ে শুভ দিনের সূচনা করেন অসমের বাসিন্দারা। তিল, চিনাবাদাম দিয়ে তৈরি মিষ্টি বিতরণ করা হয়। পাশাপাশি বিহু গানের সঙ্গে ছন্দে মেতে ওঠেন অসমবাসীরা।
তামিলনাড়ু – পোঙ্গল
তামিলনাড়ুতে চার দিন ব্যপি পালিত হয় এই উৎসব। প্রথম দিন হয় ভোগী পাণ্ডিগাই। এদিন সকলে পুরনো জামা কাপড় নষ্ট করে শুভ দিনের সূচনা করেন। দ্বিতীয় দিনে থাই পোঙ্গল। এদিন নতুন চাল সিদ্ধ করে দেবতাকে ভোগ হিসেবে দেওয়া হয়। তৃতীয় দিন হয় মাত্তু পোঙ্গল। এদিন গবাদি পশুকে সাজিয়ে তাকে পুজো দেওয়া হয়। আর চতুর্থ দিন হয় কানুম পোঙ্গল। এদিন সকলে নতুন জামা কাপড় পরেন এবং আত্মীয়দের মধ্যে উপহার আদান প্রদান করেন।
পঞ্জাব - লোহরি
পঞ্জাবের লোকেরা আগুন জ্বালিয়ে, পূজা করে, নতুন জামাকাপড় পরে, মিষ্টি বিতরণ করে এবং রেউড়ি, গজ্জাক, পপ কর্ন এবং বাজরে্র খিচুড়ি খেয়ে লোহরি উদযাপন করে। এই উৎসব শীতকালীন ফসল কাটার সূচনা করে।
গুজরাট - উত্তরায়ণ
গুজরাটি লোকেরা ঘুড়ি ওড়ানোর জন্য এই উৎসবের অপেক্ষা করে। গুজরাটি ভাষায় একে উত্তরায়ণ বলা হয়।
উত্তরপ্রদেশ - কিচেরি
উত্তর প্রদেশে, এই উত্সবটি খুব আনন্দের সঙ্গে পালিত হয় এবং এতে ঐতিহ্যগত স্নান এবং ঈশ্বরের উপাসনা জড়িত। এই সময়ে উত্তর প্রদেশে বিশ্বের বৃহত্তম ধর্মীয় সমাবেশ কুম্ভ মেলা দেখা যায়।
আরও পড়ুনঃ রাজ্য় জুড়ে বৃষ্টির সম্ভবনা,মকর সংক্রান্তিতেও অধরা থাকবে শীত
Share your comments