জলপাইয়ের আচার অথবা জলপাইয়ের চাটনি খেতে কার না ভালো লাগে। মূলত ভুমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে উৎপত্তিস্থল এই বিশেষ জাতের ফলের। পরে এই ফল গোটা বিশ্ব জুড়ে ছড়িয়ে পরে। এশিয়া ও ইউরোপে এই ফলের চাষ বর্তমানে প্রচুর পরিমানে হচ্ছে। জলপাই গাছের জলপাই ফল পেকে গেলেও সবুজ রঙেরই থাকে। তৈলাক্ত শাঁসযুক্ত এই ফল ভুমধ্যসাগরীয় আবহাওয়াতে ভালো ফললেও, উষ্ণ ও অবউষ্ণ আবহাওয়াতেও এর চাষ ভালো হয়। এই ফলে প্রচুর পরিমানে ভিটামিনও থাকে। কাঁচা ও পাকা যে কোনও অবস্থাতেই এই ফল খাওয়া যায়। পাকা জলপাইয়ে অধিকমাত্রায় তেল থাকে। জলপাই চাষ করে বহু চাষি অধিক আয় করছেন। এই চাষ করতে খরচ কম হওয়ায়। লাভের পরিমান অনেকাংশে বেশি থাকে। জেনে নেওয়া যাক, জলপাই চাষের সহজতম পদ্ধতি।
জমি নির্বাচন ও তৈরি (Land Preparation)
অতিবৃষ্টিতে জল দাঁড়াবে না এরকম উঁচু ও মাঝারি উঁচু জমির আগাছা পরিষ্কার করে তাতে ভালোভাবে চাষ দিতে হবে
রোপণের সময় (Planting Time)
জলপাই গাছের চারা রোপনের সঠিক সময় মে-অক্টবর মাস। জল সেচের যদি সু-ব্যবস্থা থাকে তাহলে জলপাইয়ের চাষ সারা বছরই করা যায়।
গর্ত তৈরি
কলম রোপণের অন্তত ১৫-২০ দিন পূর্বে সোয়া ২৩ ফুট × সোয়া ২৩ ফুট দূরত্বে সোয়া তিন ফুট × সোয়া ৩ ফুট× সোয়া ৩ ফুট আকারের গর্ত করে খোলা অবস্থায় রাখতে হবে। কলম রোপণের ১০ থেকে ১৫ দিন আগে গর্ত প্রতি ১৫-২০ কেজি পচা গোবর, ৩০০-৪০০ গ্রাম টিএসপি, ২৫০-৩০০ গ্রাম পটাশ, ২০০ গ্রাম জিপসাম ও ৫০ গ্রাম দস্তা সার গর্তের মাটির সাথে ভালভাবে মিশিয়ে গর্ত বন্ধ করে রেখে দিতে হবে। মাটিতে রস কম থাকলে জল সেচের জন্য ব্যব্যস্থা করতে হবে।
চারা রোপণ ও পরিচর্যা (Planting and Caring)
গর্ত ভর্তির ১০-১৫ দিন পর নির্বাচিত চারাটি গর্তের ঠিক মাঝখানে এমনভাবে বসাতে হবে, যেন চারার গোড়া ঠিক খাড়া থাকে এবং কোনও ভাবে আঘাত যাতে না লাগে। চারা রোপণ হয়ে গেলে সঙ্গে সঙ্গে জল দিতে হবে এবং খুটিঁ ও বেড়া দিয়ে চারাগাছটি ঘিরে দিতে হবে। ১ থেকে ২ দিন বাদে বাদে অবশ্যই গাছে জল দেওয়া উচিত।
সার প্রয়োগ (Fertilizer)
গোবর সার, ইউরিয়া, টিএসপি, এমওপি-র মতন সার ভালো মানের জলপাই পেতে প্রয়োগ করা উচিত। তিন কিস্তিতে সারগুলি প্রয়োগ করতে হবে। সারের প্রথম কিস্তি বর্ষার শুরুর মাসে, ২য় কিস্তি বর্ষার শেষে এবং শেষ কিস্তি শীতের শেষে প্রয়োগ করতে হবে।
আরও পড়ুন: Coconut Meat : নারকেলেও রয়েছে প্রচুর পুষ্টি, এর তৈরি হচ্ছে ওষুধ, জেনে নিন নারকেলের ঔষধি গুণ সম্পর্কে
সেচ দিতে হবে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ, মাটি ও গাছের বয়স খেয়াল রেখে। শীতকালে ৪-৫ সপ্তাহ ও গরমকালে ২-৩ সপ্তাহ পর পর সেচ দেওয়া উচিত। কম করে দুই বার ফল ধরার পর সেচ দেওয়া উচিত। বর্ষায় যাতে গাছের গোড়ায় জল না জমে সেদিকেও নজর রাখতে হবে।
রোগ দমন (Disease Control)
ক) জলপাইয়ের পাতা পোড়া রোগ
এই রোগে আক্রান্ত হলে পাতায় প্রথমে হলুদ দাগ পড়ে পরে তা বাদামী হয় এবং পাতা শুকিয়ে যায়।
রোগ দেখা দেওয়ার আগে করণীয়--
ফল সংগ্রহ শেষ হলে গাছের মরা ডালপালা, ফলের বোটা, রোগ বা পোকা আক্রান্ত ডাল পালা ও অতিঘন ডাল পালা ছাটাই করে পরিস্কার করে দেওয়া উচিত। গাছের ডালপালা পরিস্কার করার পর একটি ছত্রাক নাশক ও একটি কীটনাশক দ্বারা পুরো গাছ ভালভাবে স্প্রে করে দেওয়া উচিত।
রোগ দেখা দেওয়ার পর করণীয়--
১. গাছে রোগ দেখা দিলে আক্রান্ত ডাল বা পাতা ছেঁটে দেওয়া উচিত। আক্রান্ত গাছে ডাইথেন এম ৪৫ বা রিদোমিল গোল্ড ২ গ্রাম / লি. হারে জলে মিশিয়ে স্প্রে করা করলে এই রোগের বিনাশ হবে।
ফল সংগ্রহ (Harvesting)
বর্ষার শুরুতে গাছে ফুল আসে এবং শীতের মুখে ফল পাকে। জলপাই পাকার পরও তা সবুজ থাকে। সঠিক ভাবে যত্ন নিলে একটি জলপাই গাছ থেকে বছরে ২০০-২৫০ কেজি ফল পাওয়া যায়। গাছের তলায় জাল বিছিয়ে সবসময় জলপাই গাছ ধরে ঝাঁকা দেওয়া উচিত। এতে ফল মাটিতে পড়ে নষ্ট হয়ে যায় না।
আরও পড়ুন: IDBI Recruitment: IDBI ব্যাংকে নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত, দেখে নিন তথ্য
Share your comments