মাছ চাষ তো সকলেরই জানা | কিন্তু মাছের সাথে হাঁসের চাষ (Duck farming) শুনেছেন কখনো? হ্যাঁ, মাছের সাথে হাঁসের সমন্বিত চাষ পদ্ধতি দূর করছে বেকার সমস্যা | গ্রামীণ অর্থনীতিতে এ এক নতুন দিশা দেখাচ্ছে | তাই, মাছের চাষের (Fish cultivation) সাথে হাঁসের এই লাভজনক চাষে আপনিও পেতে পারেন অধিক উপার্জন |
এই নিবন্ধে মাছের সাথে হাঁসের চাষের খুঁটিনাটি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো;
কিভাবে শুরু করবেন (How to start)?
সাধারণত, মৎস্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তাদের মতে, পুকুরে হাঁস ও মাছের সমন্বিত চাষ পদ্ধতি অবলম্বন করলে খুব সহজে বেশি লাভবান হওয়া সম্ভব। এই প্রকল্পটি সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করতে চাইলে আপনাকে ৪০-৫০ শতাংশ আয়তনের একটি পুকুর নির্বাচন করতে হবে। ১০০- ১৫০টি হাঁস, ১৫০০-১৮০০টি মাছের পোনা এবং হাঁসের ঘর নির্মাণ করতে হবে। এসব সঠিকভাবে ব্যবস্থা করলে ভালো হয়। আর পাহারাদারের ঘরটি হাঁসের ঘরের দক্ষিণ পাশে হলে ভালো হয়।
কিভাবে পুকুর তৈরী করবেন (Pond Preparation)?
প্রথমত, পুকুরের চারপাশের পাড় ভালোভাবে মাটি দিয়ে উঁচু করে বাঁধতে হবে। পুকুরের তলদেশ সংস্কার করতে হবে, আগাছা পরিষ্কার করতে হবে। পুকুরে চুন প্রয়োগ করতে হবে প্রতি শতকে ১ কেজি হারে। চুন প্রয়োগের পর জল সরবরাহ করতে হবে। মনে রাখবেন চুন প্রয়োগের ২-৩ সপ্তাহ পর মাছ ছাড়তে হবে। পুকুরে কোনো আগাছা রাখা যাবে না, এমনকি পানা থাকলেও তা পরিষ্কার করে দিতে হবে। পুকুরে জল কমানো বা বাড়ানোর ব্যবস্থা থাকতে হবে।
কোন জাতের মাছ নির্বাচন করতে হবে?
হাঁস চাষ করায় পুকুরে মাছের বিভিন্ন প্রকার খাবারের সৃষ্টি হয়। এজন্য ভিন্ন ভিন্ন খাদ্যাভ্যাসের বিভিন্ন জাতের মাছের চাষ করা উচিৎ। মৎস্য বিশেষজ্ঞদের মতে, মাছের প্রজাতির মধ্যে সিলভার কার্প ও কাতলা-জলের উপরের স্তরে খাদ্য খায় গ্রাস কার্প-পুকুরের জলজ আগাছা ও ঘাস খায়, কমন কার্প- পুকুরে তলদেশের খাদ্য খায়। এছাড়াও মৃগেল, কালিবাউশ, মিরর কার্প, সরপুঁটিসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছের চাষ করতে পারেন। মাছের সম্ভব্য সংখ্যা: প্রতি শতকের জন্য সিলভার কার্প- ১০-১৫টি, কাতলা/ব্রিগেড- ৬টি, মৃগেল ৬টি, কালিবাউশ ৩টি, গ্রাস কার্প ৩টি, সরপুঁটি ৭-১০টি।
হাঁসের ঘর তৈরির পদ্ধতি (Duck house):
পুকুর পাড়ে ঘরটি তৈরি করতে হবে। ঘরের উচ্চতা ৫-৬ ফুট রাখতে হবে। ঘর তৈরিতে বাঁশ, বেত, টিন, খড় ইত্যাদি ব্যবহার করা যেতে পারে। ঘরটি খোলামেলা হতে হবে এবং সাপ ও ইঁদুর থেকে মুক্ত রাখতে হবে।
উন্নত জাতের হাঁস নির্বাচন:
হাঁসের জাত নির্বাচন করার ক্ষেত্রে যে জাতের হাঁস বেশি ডিম দেয় সে জাতের হাঁস নির্বাচন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে ইন্ডিয়ান রানার ও খাকি ক্যাম্পেবেল নির্বাচন করা যেতে পারে। এ জাতের হাঁস ৫ মাস বয়স থেকে ২ বছর পর্যন্ত ডিম দেয়। খাকি ক্যাম্পেবেল বছরে ২৫০- ৩০০টি ডিম দিয়ে থাকে।
হাঁসের খাবার (Food):
শুকনো খাদ্য না দিয়ে হাঁসকে সবসময় ভেজা খাদ্য দেওয়া উচিত। খাদ্যে আমিষের পরিমাণ ডিম দেওয়া হাঁসের ক্ষেত্রে ১৭-১৮ শতাংশ ও বাচ্চা হাঁসের ক্ষেত্রে ২১ শতাংশ রাখা উচিত।
আরও পড়ুন - আয় বৃদ্ধির জন্য কোন জাতের গো - পালন করবেন কৃষকবন্ধুরা?
৪০-৫০ শতাংশের একটি পুকুরে ১০০টি হাঁসের জন্য এ প্রকল্প যদি শুরু করা হয়, তবে সব মিলে খরচ দাঁড়াবে ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা। সঠিক পরিচর্যা আর যত্ন নিতে পারলে প্রথম বছরে যাবতীয় ব্যয় বাদ দিয়ে ৬০-৯০ হাজার টাকা আয় করা সম্ভব হতে পারে। এক্ষেত্রে আপনি আরও লাভবান হতে পারেন এই পদ্ধতি অবলম্বনে |
নিবন্ধ: রায়না ঘোষ
আরও পড়ুন - Fish Farming: বাংলাদেশে তেলাপিয়ার সাথে পাংগাস মাছের লাভজনক মিশ্র চাষে ব্যাপক সাফল্য মিলছে
Share your comments