করোনার দাপটে অন্যান্য সব কিছুতে মন্দা দেখা দিলেও, কৃষি ক্ষেত্রে লাভের মুখ দেখা সম্ভব হবে, অন্ততপক্ষে বাজার তারই ইঙ্গিত দিচ্ছে। বুধবার মহিন্দ্রা অ্যাণ্ড মহিন্দ্রা সংস্থার তরফে জানানো হয়েছে, দেশে তাদের ট্রাক্টর বিক্রির সংখ্যা ১২ শতাংশ বেড়েছে। এবছরের জুন পর্যন্ত ট্রাক্টর বিক্রি হয়েছে ৩৫,৮৪৪টি। অভ্যন্তরীণ বাজার এবং রফতানি মিলিয়ে মোট বিক্রি হওয়া ট্রাক্টরের সংখ্যা ৩৬,৫৪৪টি, এমনটাই জানা গেছে সংস্থার তরফে। মহিন্দ্রা সংস্থার তরফে হেমন্ত সিক্কা জানিয়েছেন, “এই ধরনের বিক্রি আগে কখনও হয়নি। তাছাড়া, মৌসুমী বৃষ্টি সময় মতো হয়েছে। সরকারের তরফে কৃষিতে বিভিন্ন খাতে অনুদানের পরিমাণ বেড়েছে। খারিফ শস্যের বপনও খুব ভাল হয়েছে।” তিনি আরও জানিয়েছেন, আগামী মাসেও চাহিদা বাড়ার সম্ভাবনাই প্রবল।
বিগত বছরের তুলনায় এ বছর বৃদ্ধি পেয়েছে ট্রাক্টর বিক্রির সংখ্যা -
অন্য দিকে, এসকর্ট এগ্রি লিমিটেড সংস্থারও ট্রাক্টর বিক্রির পরিমাণ বেড়েছে। ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত ট্রাক্টর বিক্রি হয়েছে ১০,৮৫১ টি, বিগত বছরে এই সংখ্যা ছিল ৮,৯৬০। বিক্রির সংখ্যা বেড়েছে ২১.১ শতাংশ। সংস্থার তরফে জানানো হয়েছে, দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারেই বিক্রি হয়েছে ১০,৬২৩টি ট্রাক্টর, আগের বছরে ছিল ৮,৬৪৮। তবে, রফতানি খাতে বিক্রির সংখ্যা কিছুটা কমেছে। ২০১৯ সালে যেখানে ৩১২ টি ট্রাক্টর বিক্রি করা হয়েছিল, সেখানে চলতি বছরে বিক্রি ট্রাক্টরের সংখ্যা ২২৮। শেয়ার বাজারে স্টক ফাইল করার সময়ে এক বিবৃতিতে এসকর্ট সংস্থার তরফে জানানো হয়েছে, “চলতি মাসে নজিরবিহীন চাহিদা চোখে পড়েছে। লক-ডাউনে মানুষ শহর ছেড়ে নিজের জায়গায় ফিরছে। এ বছর পর্যাপ্ত বৃষ্টির কারণে, খারিফের ফলন ভাল হবে বলে আশা করা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ফসলের পর্যাপ্ত পরিমাণের ফলনে ভালো মূল্যই পাবেন চাষিরা। গ্রামীণ অর্থনীতিতে সরকারি সহায়তায় নগদের যোগান বেড়েছে। তাই ট্রাক্টর বিক্রির সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে।”
এদিকে, পরিযায়ী শ্রমিকেরা নিজ দেশে ফেরার পর হাল ফিরছে কৃষিক্ষেত্রের, আগামী বছর গুলিতেও কৃষিক্ষেত্রে উৎপাদন অনেকাংশে বাড়বে বলে মত ওয়াকিবহাল মহলের। আর এই সময় চাহিদা বাড়ছে ট্রাক্টর সহ কৃষিকাজে ব্যবহৃত অন্যান্য সরঞ্জামগুলির। এদিকে একটানা লকডাউনে জেরে অনেকটাই সঙ্কটে পড়েছিলেন মাহিন্দ্রা, ট্রাক্টর এবং ফার্ম সরঞ্জাম ট্যাফে, সোনালিকার মতো সংস্থা গুলি। বর্তমানে পরিযায়ী শ্রমিকদের অনেকেই বাড়ি ফিরে আবাদ কার্যে নিযুক্ত হচ্ছেন, ফলে সমস্ত কৃষক সরঞ্জামের চাহিদাই অনেকটা বেড়েছে। সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ট্রাক্টর ভাড়ার চাহিদা। কৃষি অধ্যুষিত এলাকাতে করোনার প্রভাবে চাষ বন্ধ হয়ে গেছে এমন দৃশ্য এখনও দেখা যায়নি। সুতরাং, এই সমস্ত এলাকাগুলিতে কৃষিকাজের বহমানতা বজায় থাকারই আশা করা যাচ্ছে। যার ফলে এই সমস্ত জায়গায় ট্রাক্টর ভাড়ার মাধ্যমে চাষাবাদের চাহিদাও অনেকটা বৃদ্ধি পেয়েছে, এর সঙ্গে নতুন ট্রাক্টর কেনার দিকেও ঝুঁকছেন অনেকে। তাছাড়া, ট্রাক্টর কেনার জন্য একাধিক গ্রামীণ ব্যাঙ্ক এবং NBFC -র রয়েছে বিভিন্ন প্রকল্প, সাধারণত মোট দামের ২৫-৩০ শতাংশ ডাউন পেমেন্টেই কৃষকেরা ট্রাক্টর গুলি ডিলারদের থেকে নিজেদের হাতে পেয়ে যান। একটি ট্রাক্টরের গড় মূল্য যেখানে ৬-৭ লাখের কাছাকাছি সেখানে ২ লাখ টাকার ডাউন পেমেন্টেই ট্রাক্টর ক্রয় করতে পারেন কৃষক।
৫০০০ টাকার ডাউন পেমেন্টে ট্রাক্টর -
অপর দিকে, ৫০০০ টাকার ডাউন পেমেন্টে ট্রাক্টর বিক্রি করতে সম্মত হয়েছে মালি ফার্গুসন সংস্থা। কৃষি যন্ত্রাংশ বিক্রির সংস্থা মাসি ফার্গুসন গত সপ্তাহে মাত্র ৫০০০ টাকার ডাউন পেমেন্টে ট্রাক্টর বিক্রির একটি নতুন স্কিম নিয়ে এসেছে বলে জানা গেছে। অন্যদিকে এই খারিফ মরসুমে কৃষকদের আবাদ কার্য বৃদ্ধি পায়, স্বাভাবিকভাবেই ট্রাক্টর বিক্রির চাহিদা গোটা দেশ জুড়েই এ সময় কিছুটা বেশী থাকে। পাশাপাশি খাদ্যশস্যের চাহিদা বাড়লে উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য ট্রাক্টর সহ অন্যান্য যন্ত্রাংশের চাহিদা যে আগামীতে আরও বৃদ্ধি পাবে, তা বলাই বাহুল্য।
সুব্রত সরকার
Image Source - Google
Related Link - পি এম কিষাণ যোজনার অন্তর্ভুক্ত কৃষকদের (Rs. 15,000/ Provision- PM Kisan Yojana) সরকার কর্তৃক ১৫০০০ টাকা প্রদান
কৃষকরা পাবেন ফার্ম যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম (farm equipment) ক্রয়ে সরকারের থেকে 80% পর্যন্ত ভর্তুকি
Share your comments